দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘ মন্দাভাব কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। সম্প্রতি পুঁজিবাজারের সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকার পাশাপাশি বাড়ছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। এর সুবাদে বাড়ছে বাজার মূলধন। ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে অস্বাভাবিকহারে দরও কমতে পারছে না কোনো কোনো শেয়ার বা ইউনিটের। সব মিলিয়ে বাজারের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে বাজারে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে আমান গ্রুপের লুটপাট!

পুঁজিবাজার ও আবাসনে কালো টাকা বিনিয়োগের নিয়ম 

এদিকে, পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে যে সব বিও অ্যাকাউন্ট এতদিন সচল ছিল না সেসব অ্যাকাউন্ট আবার সচল হচ্ছে। ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি। পাশাপাশি বাড়ছে ফোনো এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন। এদিকে পুঁজিবারের পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার কারণে এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

রও পড়ুন…

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতিদিন বাজারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অন্তত এক হাজার নতুন মুখ। গত ১৮ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার। জুলাই শেষে পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২২ লাখ ৯৯ হাজার ২৫১টি। আগস্টের শেষে তা দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ১৬ লাখ ৯৯৬টি। এই সময়ে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ১৭ হাজার ৭৪৫টি। আগস্টে কার্যদিবস ছিল মোট ১৮টি। সে হিসাবে প্রতিদিন বাজারে যুক্ত হয়েছে ৯৮৫টি বিও অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারী।

বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানসহ অন্য কমিশনারদের রদবদলের পরই বাজারের এ চিত্র দেখা যাচ্ছে। তারা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই বাজারের সার্বিক চিত্র আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছে।

গত এক মাসের বাজারচিত্রে দেখা যায় এ সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ দিনই অধিকাংশ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার এবং ইউনিটের দর ঊর্ধ্বমুখী ছিল। যার যের ধরে এ সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন যোগ হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক মাস আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ২৮ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার এবং ইউনিটের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৬৮ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকায়।

একইভাবে এ সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এক মাস আগে ডিএসইতে লেনদেন ছিল ৬০০ কোটি টাকার ঘরে। যদিও করোনাকালের প্রথমদিকে মূল মার্কেটে লেনদেন ৪০ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। বর্তমানে সেই লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। লেনদেনের পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে সন্তোষজনকহারে বেড়েছে সূচক। এক মাসের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ৬৪৮ পয়েন্ট। গত একমাস আগে সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ২২১ পয়েন্টে। বর্তমানে তা অবস্থান করেছে চার হাজার ৮৬২ পয়েন্টে।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা আস্থা নিয়ে বাজারে ফিরে এলেও তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। তাদের অভিমত পুঁজিবাজার এর আগে অনেকবার স্থিতিশীলতার আভাস দেওয়ার পরও তা দীর্ঘমেয়াদি হয়নি। কিছুদিন পরেই বাজারচিত্র পরিবর্তন হয়ে গেছে। এতে লাভের বদলে উল্টো লোকসান গুনতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

ডিএইর পরিচালক শাকিল রিজভী এ বিষয়ে বলেন, বাজার এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে। এমন পরিবেশ তৈরি হলে সবসময়ই এর সঙ্গে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যোগ হন। এটা আসলে স্বাভাবিক নিয়মেই হয়। এখন বাজার ভালো বলে বিভিন্ন পেশার মানুষ এখানে আসছেন। এটা ভালো খবর। তবে মার্কেটের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। পুঁজিবাজারে লাভ-লোকসান দুটোই আছে। তাই এটা হিসাব করেই তবে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অনেক বেশি হিসাবি হতে হবে।

এদিকে, বিডি ফাইন্যান্সের অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বাজার ভালো হবে-এমন কথা শুনে নতুন করে বিনিয়োগ করে পূর্বে বহুবার সমস্যায় পড়তে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। তাই বাজারচিত্র ভালো হলেও আমরা শঙ্কার মধ্যে থাকি। তিনি বলেন, এখন বাজার পরিস্থিতি ভালো। এ সময়ে যদি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাসহ অন্যরা বাজারের দিকে গুরুত্বের সঙ্গে নজর রাখেন, তাহলেই আমরা একটি স্থিতিশীল বাজার পেতে পারি। আমাদের দরকার একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার, যেখানে আস্থার সাথে বিনিয়োগ করা যাবে।