আকতারুজ্জামান সুজন, দেশ প্রতিক্ষণ, চরফ্যাসন: ভোলার চরফ্যাসনের বেতুয়া-ঢাকা নৌরুটে লঞ্চের যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগীতায় গত কয়েকদিনে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ভাড়া কয়েকগুণ কমিয়ে ৫ টাকা করেছে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের এমন প্রতিযোগীতার কারনে ৩০০ টাকার ভাড়া কমে এখন ৫ টাকায় নেমে আসায় হতবাক হয়েছে যাত্রীরাও।

১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বেতুয়া লঞ্চঘাটে ঘুরে দেখা যায়, লঞ্চঘাটে ৩টি লঞ্চের স্টাফদের ডাক-চিৎকার। ঢাকার ভাড়া মাত্র ৫ টাকা। ৫ টাকা করে টিকিট কেটে যাত্রীদের লঞ্চে উঠানো হচ্ছে। যাত্রীদের নিয়ে টানাহেঁচড়ার দৃশ্যও দেখা গেছে অহরহ।

জানা যায়, চরফ্যাসন বেতুয়া লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা সদর ঘাট পর্যন্ত দূরত্ব ২৭৪ কিলোমিটার। প্রতিদিন বেতুয়া লঞ্চঘাট থেকে এমভি ফারহান, এমভি তাসরিফ ও এমভি কর্ণফুলী কোম্পানি থেকে ১টি করে ৩টি লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকায়। পূর্বে এসব লঞ্চের ডেকের ভাড়া ছিলো ৩০০ টাকা। লঞ্চে যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে যাত্রীদের ভাড়া কমানোর অফার দিতে গিয়ে লঞ্চের ভাড়া এখন ৫ টাকা হয়েছে।তবে লঞ্চের ভাড়া কমানোর ব্যাপারে একে অপরকে দোষারোপ করছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।

এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের সুপারভাইজার শামীম হাসান অভিযোগ করে বলেন, তাসরিফ ও কর্ণফুলী লঞ্চের কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী লঞ্চ ছাড়ার সময়সূচী মানেনা, তারা অধিক যাত্রী লঞ্চে উঠানোর জন্য ধাপে ধাপে ভাড়া কমাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরাও ভাড়া কমিয়ে ৫ টাকা করেছি।

পাল্টা অভিযোগ করে তাসরিফ লঞ্চের সুপারভাইজার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ফারহান লঞ্চের সেবার মান খারাপ হওয়ায় যাত্রীরা ওই লঞ্চে যাতায়াত করতে পছন্দ করেনা, তাই তারা ধাপে ধাপে ভাড়া কমিয়ে এখন ৫ টাকা করেছে। তবে গতকাল (শুক্রবার) আমরা ১০ টাকা করে যাত্রী তুলেছি। ফারহান লঞ্চের কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে একই কথা জানালেন কর্ণফুলী-১৩ লঞ্চের সুপারভাইজার মোঃ রুবেল। তিনি বলেন, লঞ্চে যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগীতার মধ্যেও আমরা ১০০ টাকা করে ভাড়া নিয়েছি, অধিকসংখ্যক যাত্রীও পেয়েছি।

এদিকে লঞ্চের এমন কম ভাড়ার কারণে বর্তমানে বেতুয়া লঞ্চঘাটে যাত্রীদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। লঞ্চযাত্রী জুয়েল জানান, শুনেছি একসময় ৫ টাকা দিয়ে ঢাকা বরিশাল যাওয়া যেতো, সেই গল্প এখন বাস্তবে দেখতেছি। হেলাল উদ্দিন বলেন,৩০০ টাকার টিকেট ৫ টাকা দিয়ে কাটতে পেরে আমি খুব খুশি। রেদোয়ান নামে আরেক যাত্রী বলেন, বেতুয়া লঞ্চঘাটে শায়েস্তা খানের আমলের ছোঁয়া লেগেছে।

অভ্যন্তরীন নৌ-বন্দর ভোলার সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, চরফ্যাসনের বেতুয়া-ঢাকা নৌরুটে সরকার নির্ধারিত লঞ্চের ভাড়া ৩০০ টাকা। ১০ টাকা ৫ টাকা অফার দিয়ে ডাক-চিৎকার করে যাত্রীদের লঞ্চে উঠানো, এটা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের হীনমন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। বিষয়টি এই মাত্র শুনেছি, এ ব্যাপারে আমি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করতেছি।