দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জিকিউ বলপেন নিয়ে এখলাস ও মিলনের কারসাজি শীর্ষক দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণে সংবাদ প্রকাশের পর নডেচড়ে বসে বিএসইসি। এ ঘটনার পর থেকে কারা এ শেয়ারের কারসাজিতে জড়িত খুঁজতে থাকে বিএসইসি। অবশেষে বিএসইসি এ ঘটনার সত্যতা পায়।জিকিউ বলপেনের শেয়ার কারসাজিতে পাঁচ ব্যক্তি ও এক কোম্পানির যোগসাজশে জিকিউ বলপেনের শেয়ার কারসাজির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। কারসাজি সঙ্গে জড়িত কোম্পানিটির ১টি বিও এবং পাঁচ বিনিয়োগকারীর ৯টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব জব্দ করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি।

রও পড়ুন…

মুন্নু সিরামিকের পাবলিক মার্কেটে ফিরেই বাজিমাত

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি জানানো হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিএসইসির সহকারী পরিচালক শহীদুল ইসলাম এবং বিও হিসাব ও শেয়ার ধারণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট বিভাগের প্রধান মঈনুল হকের সমন্বয়ে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। দুই মাসে শেয়ারটির দাম বেড়ে প্রায় চার গুণ হয়ে গেছে। অস্বাভাবিক এ মূল্যবৃদ্ধির তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে ১০টি বিও হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন বা অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রাথমিক তথ্য পায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তার ভিত্তিতে অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়েছে। আর তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ১০টি বিও হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জিকিউ বলপেনের মোট শেয়ার ৮৯ লাখ ২৮ হাজার ৯১টি। তার মধ্যে উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৪১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বা ৩৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪টি শেয়ার। বাকি ৫১ লাখ ৮৯ হাজার বা প্রায় ৫৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। এসব শেয়ারের মধ্য থেকে ৩০ লাখ শেয়ার পাওয়া গেছে জব্দ হওয়া ১০টি বিও হিসাবে।

এর মধ্যে কোম্পানির অবণ্টনকৃত শেয়ারের জন্য নির্ধারিত সাসপেন্স বিও হিসাবেই পাওয়া গেছে ২২ লাখ শেয়ার। অপর পাঁচ বিনিয়োগকারীর নয়টি বিও হিসাবে পাওয়া গেছে ৮ লাখ শেয়ার। এসব বিও হিসাবে কোম্পানিটির বিপুল শেয়ারের সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়ায় সব কটি বিও হিসাবই গতকাল বুধবার জব্দ করা হয়। কোম্পানির সাসপেন্স বিও হিসাবের বাইরে জব্দ হওয়া অন্য নয়টি বিও হিসাবের মধ্যে এ আর এম ফরিদউদ্দীনের দুটি, মো. এখলাসুর রহমানের তিনটি, আশরাফুর রহমান ও তাকসিনা আকতারের একটি করে এবং এএফএম রফিকুজ্জামানের দুটি।

কোম্পানির নিজস্ব সাসপেন্স হিসাবে সাধারণত কোম্পানির বোনাস ও আইপিওর অবণ্টিত শেয়ার থাকে। জিকিউ বলপেনের সাসপেন্স হিসাব রয়েছে পিএফআই সিকিউরিটিজ নামের ব্রোকারেজ হাউসে। আবার এ ব্রোকারেজ হাউসের উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান সালমা হক। সেই সাসপেন্স বিও হিসাবে এত (২২ লাখ) শেয়ার কোথায় থেকে ও কীভাবে এল, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলাবে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার যদি কাগুজে শেয়ার হিসেবে থেকে যায় এবং উদ্যোক্তাদের নামে কোনো বিও হিসাব না থাকে, তখন লভ্যাংশ বা বোনাস শেয়ারের উদ্যোক্তাদের অংশও সাসপেন্স হিসাবে জমা হয়। এর বাইরে সাসপেন্স হিসাবে এত বেশি শেয়ার থাকার কোনো যৌক্তিক কারণই খুঁজে পাচ্ছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

কারণ, কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় ২৫ শতাংশ বা ২২ লাখ শেয়ার অবণ্টিত থাকার কথা নয়। কোম্পানিটির সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.৮১ টাকা। তা সত্ত্বেও শেয়ারটির আকাশচুম্বী মূল্য হয়েছে। যার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।