দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কোম্পানি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএস) আদালতের আদেশে বর্তমানে অবসায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় এসে চালু করতে আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি এবং শামসুল আলামিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর শামসুল আলামিনসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী আগ্রহ দেখিয়েছেন। আলমগীর শামসুল আলামিনের পরিবারের কয়েকজন সদস্য এক সময় পিএলএফএসের মালিকানায় ছিলেন। তারা পরিচালনা পর্ষদেও ছিলেন।

রও পড়ুন…

স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে কেবল আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ দেয়া হয়: বিএসইসি চেয়ারম্যান

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ৩৯ কোটি টাকা

কোম্পানিটির অবসায়ন প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিব উল আলমের মতামত নিয়ে তা পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। বিশিষ্ট এ আইনজীবী আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি আলমগীর শামসুল আলামিনসহ কয়েক শিল্প উদ্যোক্তা পিপলস লিজিং বন্ধ না করে চালু করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি আবেদন করেছেন। এই আবেদনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি মতামতও চেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যারিস্টার তানজিব উল আলমের আইনি মতামত নিয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে।

এর আগে পিপলস লিজিং থেকে বিতরণ করা ঋণের অধিকাংশই জালিয়াতি হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ নেন দেশ থেকে পলাতক রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদার এবং তার সহযোগীরা।

পিপলস লিজিংসহ চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে এই চক্র সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসে। পি কে হালদার মালিকানা নেওয়ার আগে ভুয়া কাগজ তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পিপলসের ৫ পরিচালককে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অপসারিতদের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ১১৬ কোটি টাকা, সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিন মিয়া ১০৭ কোটি টাকা এবং আরেফিন শামসুল আলামিন, নার্গিস আলামিন ও হুমায়রা আলামিন ২৯৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন মর্মে তখন দুদকে প্রতিবেদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আরেফিন শামসুল আলামিন, নার্গিস আলামিন ও হুমায়রা আলামিন- এই তিনজন রিহ্যাব সভাপতি শামসুল আলামিনের পরিবারের সদস্য। এসব ব্যক্তিসহ ১১ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

বাকিরা হলেন- পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাউথ বাংলা ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ ইসমাইল ও বিশ্বজিৎ কুমার রায়, সাবেক কর্মকর্তা কবির মোস্তাক আহমেদ, নৃপেন্দ্র চন্দ্র পণ্ডিত ও মো. শহিদুল হক। পরবর্তী সময়ে পি কে হালদারসহ আরও কয়েকজনের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়। তবে পারিবারিক কারণে বারবার নাম এলেও রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন সরাসরি কখনও পিপলস লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন না।

পিপলস লিজিং রুগ্ন হয়ে যাওয়ায় আমানতকারীদের জমানো টাকা মেয়াদপূর্তির পর ফেরত দিতে পারছিল না। এ কারণে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আবেদন করলে গত বছরের ১৪ জুলাই তা গ্রহণ করেন উচ্চ আদালত।

এ প্রক্রিয়া শুরুর আগ থেকেই পিপলস লিজিংসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ উত্তোলন না করতে পেরে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে আসছিলেন আমানতকারীরা। পিপলসের আমানতকারীরা জমানো টাকা ফেরত চেয়ে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আসছেন। তবে অর্থ ফেরত পাননি কেউ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিংয়ে আমানতকারীদের জমা আছে ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত রয়েছে সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ঋণের বড় অংশই নানা অনিয়মের মাধ্যমে বের হয়ে যাওয়া। এসব অর্থ ফেরত আসার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নানাভাবে যারা এখান থেকে অর্থ নিয়েছেন তাদের অনেকেই এখন পলাতক। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যে কারণে এখন প্রতিষ্ঠানটি চালুর মাধ্যমে অর্থ ফেরতের বিকল্প ভাবা হচ্ছে। তবে কী উপায়ে কতদিনের মধ্যে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে এবং বাদপড়া কর্মীদের কী হবে আলোচনার ভিত্তিতে তা ঠিক হবে।

আদালতের নির্দেশনার আলোকে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিএম আসাদুজ্জামান খান পিপলস লিজিংয়ের প্রতিষ্ঠানের সাময়িক অবসায়ক হিসেবে কাজ করছেন। আর সাবেক কর্মীদের মধ্য থেকে ২০ জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে মাত্র ১৬ কোটি টাকা।