দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪১টি কোম্পানি নূ্যনতম শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা বা নির্দেশনা মানছে না। এসব কোম্পানিতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশের কম। এর মধ্যে কোনো কোম্পানিতে মাত্র ১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তাদের। বাকি ৯৯ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

রও পড়ুন…

ব্লক মার্কেটে ৩ কোম্পানি লেনদেনের শীর্ষে

তবে প্রশ্ন এসব কোম্পানির পরিচালকদের শাস্তি হবে কি? যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব আইন কার্যকর করতে পারে সেখানে কেন এই আইন কার্যকর করতে পারছে না এ প্রশ্ন এখন ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। যদিও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩১৯টি।

২০১১ সালের ২২ নভেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে বিএসইসি নির্দেশনা জারি করে। পরবর্তী ৬ মাস অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২১ মের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো কোম্পানি এ শর্তপূরণ না করা পর্যন্ত রাইট ইসু্যসহ বাজার থেকে নতুন করে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না। আর কোনো পরিচালক এ শর্ত পূরণ করতে না পারলে তার পদ হারাতে হবে।

এ নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরই ৪ কোম্পানির ১৪ জন পরিচালক আদালতে রিট করেন। আর শেষ পর্যন্ত পরিচালকদের রিট খারিজ করে বিএসইসির সিদ্ধান্ত বহাল রাখে আদালত। পরবর্তী সময়ে এটি কোম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু এতোদিন যারা এ আইন মানেনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএসইসি এই নির্দেশনাটি কার্যকর করতে ব্যর্থ হওয়ায় নন-কমপস্নায়েন্ট কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে। বিএসইসির তথ্যনুযায়ী, ২০১৯ সালে নূ্যনতম শেয়ার ধারণ বা নির্দেশনা মনেনি ৪১ কোম্পানি, ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪০টি।

বিএসইসির ডিসেম্বরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো সিটি ব্যাংক এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সিটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন ২০১৯ সালের আগস্টে তিনজন পরিচালক তাদের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। নানা কারণে তারা এখনো শূন্যপদ পূরণ করতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নূূ্যনতম শেয়ার ধারণে বাধ্য করতে বেশ কয়েকটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকলে তারা তাদের শেয়ার বন্ধক রেখে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। উপহার হিসেবে কাউকে শেয়ার হস্তান্তরও করা যাবে না। এর আগে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকলে ওই উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারতেন না।

এখন বিক্রি তো করতে পারবেনই না, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ওই শেয়ার বন্ধক রেখে ঋণও নিতে পারবেন না। এমনকি স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের কোনো সদস্যের নামে শেয়ার হস্তান্তরও করতে পারবেন না। একই সঙ্গে উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে ওই কোম্পানি বোনাস শেয়ারও দিতে পারবে না। অর্থাৎ এতদিন শুধু রাইট শেয়ার দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল; এখন বোনাস শেয়ারও দেওয়া যাবে না।