তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আগের সপ্তাহ পতন হলেও সপ্তাহজুড়ে উত্থানে শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। সপ্তাহটিতে পুঁজিবাজারের প্রধান প্রধান সূচক বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এবং টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। তবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। সপ্তাহটিতে বিনিয়োগকারীরা সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে। এর মাধ্যমে ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ লাখ কোটি টাকার মাইলফলকে পৌঁছেছে।

রও পড়ুন..

পুঁজিবাজারে আসছে খ্যাতনামা নির্মাণকারী কোম্পানী মীর আক্তার

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসায় এই বাজারে গত তিন মাসে মূলধন বাড়লো এক লাখ কোটি টাকার মতো। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দিন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের চেয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়। গত জুলাই মাসের শুরুর দিকে যা ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী, প্রতিমাসে বাজারে ফিরছে গড়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ওপরে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘বাজারে যখন সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়, তখন বাজার গতিশীল হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ে।’ তিনি মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখন আস্থা ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে বড় বিনিয়োগকারী ও ছোট বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসতে শুরু করেছে, যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক বাজারের ওপর।

ডিএসই’র তথ্য বলছে, প্রায় ১৫ মাসের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজারের বাজার মূলধন ৪ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৭ জুন ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ লাখ কোটি টাকার ওপরে ছিল।

প্রধান এ শেয়ারবাজারের সর্বোচ্চ বাজার মূলধনের রেকর্ডটি ছিল ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫১০ কোটি টাকার। সেটি হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি। আর বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দিন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের চেয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়। এ দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩২ পয়েন্ট।

তবে গত সপ্তাহজুড়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়। কিন্তু তারপরও গত সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সবকটি মূল্য সূচক বেড়েছে। এর আগে টানা ১৩ সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে পতনের মধ্যে পড়ে শেয়ারবাজার। মূল্য সূচকের পতনের সঙ্গে কমে যায় লেনদেনের পরিমাণও। তবে সপ্তাহ ঘুরতেই আবারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরেছে শেয়ারবাজার। অবশ্য লেননের গতি কিছুটা কমেছে।

সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে চার লাখ তিন হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল তিন লাখ ৯৪ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে আট হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট । আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১২৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট। এর আগে টানা ১৩ সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ে ১ হাজার ১৪১ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বেড়েছে ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচকও। শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত এ সূচকটি গত সপ্তাহে বেড়েছে দশমিক ৩১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৩৬ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। অবশ্য তার আগে টানা ১৩ সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৪৫ পয়েন্ট। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকটি গত সপ্তাহে বেড়েছে ৯ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছিল ৬০ দশমিক ৪০ পয়েন্ট। তার আগে টানা নয় সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩৯২ পয়েন্ট।

তথ্য বলছে, বাজার মূলধন ও সবকটি মূল্য সূচক বাড়লেও গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ১৪৮টি প্রতিষ্ঠান। দাম কমেছে ১৯২টির। ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৯১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে তিন কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে চার হাজার ৫৫৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল চার হাজার ৫৭৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে এক হাজার ১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।