দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতন সামাল দিতে ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিশেষ সুবিধায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের সুযোগ হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির পর গত নয় মাসে মাত্র ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে বিভিন্ন ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রও পড়ুন..

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিশেষ তহবিলে ৯ মাসে বিনিয়োগ ২৬.৫ শতাংশ

আবার তহবিল গঠন করলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির নয় মাসে ব্যাংকগুলো বিশেষ তহবিল থেকে মাত্র ৪৮৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

বিশেষ সুবিধায় ৬০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠনের সুযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫টি ব্যাংক এই তহবিল গঠন করেছে। ব্যাংকগুলোর তহবিল গঠন ও এর স্বল্প বিনিয়োগ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (এসইসি) হতাশ।

এদিকে ব্যাংকগুলোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অংশগ্রহণ ছাড়াই পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। গত কয়েক মাসে পুঁজিবাজারে লেনদেন ও সূচক উভয়ই বেড়েছে। ব্যাংকগুলো তহবিল গঠন ও বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করায় ইতিমধ্যেই কোনো কোনো খাতের শেয়ার অতি মূল্যায়িত হয়ে পড়েছে। অবশ্য ব্যাংক, বস্ত্র, প্রকৌশল, জ¦ালানিসহ অধিকাংশ খাত এখনো বিনিয়োগ সীমায় রয়েছে।

স্থানীয় ও বিদেশিদের শেয়ার বিক্রিচাপে টানা দরপতন ঠেকাতে ক্রেতা সংকট পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকারের উদ্যোগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক ও মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করে। তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ তৈরি হয়।

ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকেও এমন তহবিল গঠন করতে পারে। এর ফলে পুঁজিবাজারে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু তহবিল গঠনে সার্কুলার জারির প্রায় নয় মাস পার হলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে অধিকাংশ ব্যাংকের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। এরই মধ্যে কিছু ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ১৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রায় ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে গত ১৮ জুন পর্যন্ত ১৪টি ব্যাংক ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। এর অর্থ গত চার মাসে মাত্র একটি ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে তহবিল গঠন করেছে। গত ফেব্রুয়ারি তহবিল গঠনের পর থেকে গত ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিশেষ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৪৮৮ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সহজ শর্তে তহবিল গঠনে ঋণ দেওয়ার সুযোগ দিলেও অধিকাংশ ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, ওয়ান, ইউসিবি, এনসিসিবিএল ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রতিটি ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে।

সিটি ও পূবালী ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ৫০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংক ৮০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এর বাইরে একই উদ্দেশ্যে আরও পাঁচটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইতিমধ্যে প্রায় ২১০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত তহবিল থেকে দুটি ব্যাংক ১৩০ কোটি টাকা নিয়ে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। অন্যরা নিজস্ব উৎস থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তহবিল গঠন করেছে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠন করা বিশেষ তহবিল ২০২৫ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে ব্যাংক। তহবিলের অর্থ শুধু পুঁজিবাজারের ২১৭টি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে, যা পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে। ওই বিশেষ তহবিলের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নিজস্ব পোর্টফোলিওতে ব্যবহার করতে পারবে।

আর ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য ঋণ হিসেবে তহবিলের ২০ শতাংশ দেওয়া যাবে। অন্য ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিওর জন্য ৩০ শতাংশ ও অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য তহবিলের ১০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেওয়া যাবে।