দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: হঠাৎ করেই ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট বীমা খাতের ২০ কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে পুরো পুঁজিবাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে বীমা খাতের কোম্পানিতে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউনিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যে গুজবে সোমবার শেয়ারবাজারে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এদিন সব বীমা কোম্পানির শেয়ার ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে।

রও পড়ুন..

ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের বীমা খাতের ২০টি কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত সোমবার সকালেই পুরো শেয়ারবাজারে পৌছে যায়। তবে খবরটি আরও অতিরঞ্জিত হয়ে বাজারে ছড়িয়ে পড়ে দুপুরের দিকে। পুরো বীমা খাতের শেয়ারে বিএসইসি মার্জিন ঋণ নিষিদ্ধ করবে বলে খবর ছড়ায়। যার কোন ভিত্তি নেই, বিএসইসির দায়িত্বশীল সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এ দিকে বীমা খাত নিয়ে এমন গুজব বাজারে ছড়ানোর পরেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়। সবাই সবার বীমা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুরো বীমা খাতের শেয়ার ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে বীমা খাতের এই আতঙ্ক শেয়ারবাজারের অন্যসব খাতেও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলছেন, ব্রোকারেজ হাউজটি যদিও তাদের ফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রির বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করেনি, কিন্তু এ নির্দেশনা প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এছাড়া খবরটি অন্যান্য হাউজে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গোটা ইন্সুরেন্স খাতের শেয়ারেই এক অনাহুত পেনিক তৈরি হয়। যার কারণে আজ লেনদেনের শুরু থেকে এখাতে বড় সেল প্রেসার দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিনিয়োগকারী জানিয়েছেন, বিএসইসির নির্দেশনা না থাকার পরও লেনদেন চলাকালীন সময়ে নোটিশ না দিয়ে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর মার্জিন বন্ধ করা হয়েছে। এতে আমরা ক্ষতিগস্থ হয়েছি। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে জানাবো। একই সাথে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ রহমত পাশা বলেন, এই ২০টি বীমা কোম্পানির শেয়ারকে আমাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে। তাই আমাদের গ্রাহকদের ঝুঁকি কমানোর জন্য এই শেয়ারগুলোতে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গ্রাহকের ঝুঁকি কমানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে কেউ একান্তই এইসব শেয়ারে মার্জিন নিতে চাইলে, তাকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আমরা আমাদের গ্রাহকদের জানিয়েছি।

বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কমিশন বীমা খাতের শেয়ারে মার্জিন ঋণ বন্ধ করার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং চিন্তাভাবনাও করেনি। তবে একটি হাউজ মার্জিন দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে মার্জিন নাও দিতে পারে। কারন ওই মার্জিনে গ্রাহকের সঙ্গে সঙ্গে তার অর্থেরও ঝুঁকি আছে। তবে কমিশনের বেধে দেওয়া সীমার থেকে বেশি মার্জিন দিতে পারবে না।

সোমবার বীমা খাতের ৪৮টি কোম্পানির মধ্যে ৪৬টির শেয়ার দর কমেছে। শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২টি কোম্পানি। শেয়ার দর কমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১০.৮০ টাকা কমেছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ টাকা কমেছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬.৮০ টাকা কমেছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের।

ই-মেইলে উল্লেখিত ২০টি ইন্সুরেন্স কোম্পানির নাম ও রোববারের (১১ অক্টোবর) পিই উল্লেখ করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর নাম ও পিই হলো-এশিয়া ইন্সুরেন্স ২৩.৯০, এশিয়া প্যাসেফিক ইন্সুরেন্স ১৮.২০, বাংলাদেশে ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স ২৫.৭০, সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্স ২৩.৮০, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স ২৫.৩০, ঢাকা ইন্সুরেন্স ২০.৯০, ইস্টল্যান্ড ইন্সুরেন্স ২৪.২০, ইসলামিক ইন্সুরেন্স ২৬.১০, জনতা ইন্সুরেন্স ২৪.৬০, কর্ণফুলী ইন্সুরেন্স ২৭.৯০, নিটোল ইন্সুরেন্স ১৯.২০, নর্দান ইন্সুরেন্স ২৪.৮০, ফিনিক্স ইন্সুরেন্স ২৬.৬০, পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স ৮.৬০, প্রগতি ইন্সুরেন্স ১২.৮০, প্রভাতী ইন্সুরেন্স ২১.৩০, পূরবী ইন্সুরেন্স ২২.৮০, রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স ১২.১০, রিপাবলিক ইন্সুরেন্স ২৫.২০ ও রূপালী ইন্সুরেন্স ১৮.৮০।

এছাড়াও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩৭টি কোম্পানির মধ্যে ৩৬টির বা ৯৭ শতাংশের ইউনিট দর কমেছে। এখাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১.১০ টাকা করে ইউনিট দর কমেছে এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড ও এনএলআই ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ টাকা করে কমেছে সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ০.৮০ টাকা করে ইউনিট্ দর কমেছে ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড ও ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। এদিন এখাতের একমাত্র রিলায়েন্স ওয়ান দ্যা ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর ০.৩০ টাকা বেড়েছে।