দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমার আওতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে এক সেমিনারে। আর এটা মনিটরিংয়ের জন্য স্থায়ীভাবে একটি জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গঠনের দাবি এসেছে। যেখানে উঠে আসে মাসে গড়ে আট শতাংশ শ্রমিক কোনো না কোনো কারণে অসুস্থ থাকে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রমিক, মালিক তথা দেশের অর্থনীতি।

বুধবার তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট এবং এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিলের মহাপরিচালক মো. আমীর হোসেন।

শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমার জন্য যে সুপারিশ এসেছে সেগুলো মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার আহবান জানিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিলের মহাপরিচালক মো. আমীর হোসেন বলেন, এরজন্য শ্রম আইন , শ্রম বিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বের সেরা ২৭টি কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৪টিই বাংলাদেশের। এখন সময় হয়েছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা।

সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ বলেন, দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনতে পারলে এ খাতের আরও উন্নয়ন হবে। একটা সেক্টর উদাহর হিসেবে থাকলে অন্য সেক্টরও এগিয়ে আসবে বিমার আওতায়। তিনি বলেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমার বিকল্প নেই। এটা থাকলে শ্রমিকরা তাদের চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকবে না। এতে তাদের কর্মদক্ষতাও বাড়বে।

স্বাস্থ্যবিমার রূপরেখা সম্পর্কে সেমিনারে জানানো হয়, একটা ফান্ড গঠন করতে হবে যেখানে শ্রমিক, মালিক, সরকার তিন পক্ষই টাকা দেবে। আর যেটা মনিটরিং করার জন্য একটা সংস্থা প্রয়োজন যা হতে পারে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে। যে ফান্ডের অর্থ দিয়ে বিমার আওতায় যখন কোনো শ্রমিকের চিকিৎসার প্রয়োজন হবে, তখন তিনি প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা পাবেন। প্রতিটি শ্রমিকের একটি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিমা কার্ড নাম্বার থাকবে। যার মাধ্যমে কোনো শ্রমিক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করলেও এ নাম্বারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিমা সেবা পাবে। আর এটা মনিটরিং করবে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) হেলথ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হানিফুর রহমান এক সমীক্ষার উদাহরণ টেনে বলেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমার জন্য মালিক পক্ষ যদি এক টাকা বিনিয়োগ করে তাহলে সেটা থেকে ১৫ টাকার অর্থিক লাভ হবে। তিনি একটি কাঠামো দিয়ে বলেন, দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের ৪৫ লাখ শ্রমিক এখন কাজ করছে।

তারা যদি প্রতিদিন এক টাকা করে স্বাস্থ্যবিমার জন্য জমা দেয় তাহলে প্রতিদিন ৪৫ লাখ টাকা হবে। এভাবে কিন্তু বছরে একটি বড় অংকের ফান্ড গঠন হয়ে যাবে। আর মালিকপক্ষ ও সরকারও সেখানে টাকা দিবে এতে আরও বড় ফান্ড হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের প্রেসিডেন্ট সিরাজুল ইসলাম রনি , মহিলা শ্রমিক লীগের শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দা খয়রুন নাহার তাসরীন বক্তব্য দেন।