দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য মুনাফা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে না পারে সেজন্য কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিনিয়োগকারীরা যাতে ন্যায্য মুনাফা পায় এজন্য কোম্পানিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি কোম্পানি বিএসইসির আইন অমান্য করে বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত লভ্যাংশ দেয়নি। চলতি মাসের ২২ অক্টোবর সোনালী পেপারের পরিচালনা পর্ষদ সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৯-২০) বিনিয়োগকারীদের ৫% নগদ ও ১০% বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থাৎ মোট লভ্যাংশের ৩৩.৩৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে। তবে বাজেটে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার বিধান রয়েছে।

গত অর্থবছরের (২০১৯-২০) আয়কর পরিপত্র অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে কমপক্ষে বোনাস লভ্যাংশের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি বোনাসের পরিমাণ নগদের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে পুরো বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।

লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়ে অনেকদিন ধরে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে আসছিল- কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করার পরও ন্যায্য লভ্যাংশ দেয় না। অনেক বিতর্কিত কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বছরের পর বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে আসছে। আর এতে কোম্পানির পরিচালকরা লাভবান হলেও বিনিয়োগকারীরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। একই সঙ্গে কোম্পানির পরিচালকরা বিনিয়োগকারীদের কথা না ভেবে নিজেদের ইচ্ছেমত লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। কোম্পানিগুলোর কোনো জবাবদিহিতা না থাকার ফলে এ ধরনের কাজ করে আসছে সংশ্লিষ্ট পরিচালকরা। নতুন কমিশনে এখন বড় স্বপ্ন দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত বীমা খাতের এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স কোম্পানি সম্প্রতি অর্থবছর শেষে কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। পরে বিএসইসি তাদের তলব করে এর ব্যাখ্যা জানতে চান ও কোম্পানির পরিচালকদের সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল বিএসইসির সভায় কর্পোরেট সুশাসন বিধিমালায় (কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড) স্বতন্ত্র পরিচালকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এ বিষয়ে বিএসইসির এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সুশাসন বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো সহজেই এই প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক বেছে নিতে পারবে। এতে শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার যেমন সুরক্ষা পাবে, তেমনি কোম্পানিগুলোর কাজও সহজতর হবে।’

এরই মধ্যে কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএসইসি। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে একজন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগও দিয়েছে। বিএসইসি এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যেসব দাবি এতদিন অবহেলিত ছিল তা সমাধানের চেষ্টা করছে।