তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী খাতের কোম্পানি বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিকস ডিভিডেন্ডের নামে প্রতারণার অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিকস ডিভিডেন্ড প্রতারণার বিষয় বিএসইকে তদন্তের দাবী জানিয়েছেন। ভালো ব্যবসা দেখিয়ে পুঁজিবাজার থেকে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করে বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিকস। তবে এখন সেই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

মুনাফা সত্ত্বেও লভ্যাংশ ঘোষণা না করায় কোম্পানিটিকে অতিরিক্ত কর প্রদানের শাস্তির কবলে পড়তে হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর পরিপত্র অনুযায়ি, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে মুনাফার কমপক্ষে ৩০ লভ্যাংশ আকারে শেয়ারহোল্ডারদেরকে দিতে হবে। যদি ৩০ শতাংশের কম দেওয়া হয়, তাহলে রিটেইন আর্নিংসে স্থানান্তর করা পুরো অংশ বা কোম্পানিতে রেখে দেওয়া পুরোটার উপরে ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।

কোম্পানিটি ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে আসে। এ কোম্পানিটি আইপিওতে প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা করে ইস্যু করে। এতে প্রতিটি শেয়ারে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ১৫ টাকা। কিন্তু সেই কোম্পানি সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যবসায় শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বেঙ্গল উইন্ডসোরের আইপিও পূর্ব ২০১১-১২ অর্থবছরের ৩.৫১ টাকার শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে নেমে এসেছে ০.১২ টাকায়। এই ইপিএসে কোম্পানিটির পর্ষদ ১.২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা ছিল। এছাড়া রিজার্ভ থেকে লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা ছিল। কিন্তু কোম্পানির পর্ষদ সেদিকে হাটেনি।

কোম্পানিটির ০.১২ টাকা ইপিএস হিসেবে নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ ৭৭ হাজার ১২০ টাকা। লভ্যাংশ না দেওয়ায় এই মুনাফার উপর ১০ শতাংশ হিসেবে অতিরিক্ত ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৭১২ টাকার কর দিতে হবে। ২৫ টাকা ইস্যু মূল্যের শেয়ারটি ১৭ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল গেইনের বিপরীতে লোকসান গুণতে হচ্ছে।

গত কয়েক বছরে ধরেই ব্যবসায় নিম্নমূখী রয়েছে বেঙ্গল উইন্ডসোর। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ২.৫৭ টাকা। যা প্রতিবছর ধরেই কমছে। এরপরের অর্থবছরগুলোতে ক্রমানয়ে ২.৫৪ টাকা, ১.৮৫ টাকা, ১.৫৩ টাকা ও ১.০৬ টাকা হয়। যা সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ০.১২ টাকায় নেমে এসেছে। করোনায় এ কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে লোকসান হয়েছে।

তবে করোনার আগে থেকেই ব্যবসায় মন্দায় রয়েছে। কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ০.২৯ টাকা ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ০.১৮ টাকা ইপিএস হয়েছিল। যা তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ০.০৫ টাকা। এতে করে ৯ মাসে ইপিএস হয়েছিল ০.৪১ টাকা। যা শেষ প্রান্তিকে ০.২৯ টাকা লোকসানের কারনে নেমে এসেছে ০.১২ টাকায়।

ভালো ব্যবসা দেখিয়ে পুঁজিবাজার থেকে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করে বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিকস। কোম্পানিটি ইস্যুর জন্য অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখিয়েছে, অন্যথায় এখন শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারনার জন্য ব্যবসায় ধস দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যে কারনে বিভিন্ন কোম্পানির ন্যায় বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিক আর্থিক হিসাব পূণ:নিরীক্ষার দাবি তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিক ডিভিডেন্ড প্রতারণার কথা উল্লেখ করে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন তদন্তের দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ.কে.এম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিক ডিভিডেন্ডের প্রতারণা, বিএসইতে চিঠি দিবে বলে জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিটির অসত্য আর্থিক প্রতিবেদন, দুর্বল করপোরেট গভর্ন্যান্স, লভ্যাংশ প্রদান না করা, রিজার্ভে টাকা রেখে লুটপাট করা, দুর্বল আইপিও অনুমোদন। এ কোম্পানির ডিভিডেন্ড প্রতারণার কারণে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে। পর্যপ্ত মুনাফা ও রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না।

এ বিষয় পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিক ডিভিডেন্ডের নামে বিনিয়োগকারেীদের সাথে প্রতারনা করছে। এ কোম্পানির পরিচালকরা স্বচ্ছ নয়। পরিচালকদের অনৈতিক কার্যকলাপের চিত্র ফুটে উঠছে।যার কারনে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা। এ ব্যাপারে কোম্পানির সচিবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেনি।