দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ডিজিটাল পুঁজিবাজার গড়ার লক্ষ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিদর্শন করলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। আজ দুপুর ১২টায় পরিদর্শন করেন বিএসইসিরে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।  এ সময় চার কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। এটি নতুন কমিশন দায়িত্বগ্রহণের পর প্রথম পরিদর্শন। প্রতিনিধি দল রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত নতুন এই ভবনটি ঘুরে দেখেন। মিডওয়ে সিকিউরিটিজসহ বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের খোঁজ খবর নেন কমিশনের চেয়ারম্যান। এছাড়াও ডিএসইর আইটি বিভাগকে শক্তিশালী করার তাগাদা দেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম, কমিশনার খোন্দকার কামালুজ্জামান, অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. মোঃ মিজানুর রহমান, মোঃ আব্দুল হালিম উপস্থিত ছিলেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান, পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারের মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ মুনতাকিম আশরাফ, হাবিব উল্লাহ বাহার, অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মাসুদ, মোঃ শাকিল রিজভী, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক৷

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএসইসি’র কমিশনারগণ বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জকে কেন্দ্র করেই পুঁজিবাজারের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা সব সময়ই বেশি। আমাদের সবার উদ্দেশ্য, পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া। এই লক্ষ্যে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সমন্বিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রথম ও প্রধান কাজ হবে সবার আগে সমস্যাগুলো বের করা৷ তারপর এর সমাধান করা৷ বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যত পুঁজিবাজারকে একটি আধুনিক ও যুগোপোযোগী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে৷

তারা আরো বলেন বিনিয়োগকারীগণ পুঁজিবাজারে সুন্দর পরিবেশের অপেক্ষায় আছে৷ যদি বিনিয়োগকারী নিশ্চিত হয় যে, তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ ও রিটার্ন আসবে তাহলে সেকেন্ডারি মার্কেট গতিশীল হবে৷ বৈঠকে কমিশনারগণ আরো বলেন, ইকুইটি বেজড কার্যক্রমের বাইরে আমরা বন্ড নিয়ে কাজ করব৷ শিল্পায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে৷

সর্বোপরি সব ক্ষেত্রেই সুশাসন নিশ্চিত করা হবে৷ চ্যালেঞ্জ অনেক সময় সুযোগ তৈরি করে দেয়৷ এ জন্য স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সমন্বিভভাবে এগিয়ে যেতে চাই৷ রেগুলেটরের কাজ হচ্ছে মূলত ২ পক্ষের ভেতর সমন্বয় গড়ে তোলা৷ সমন্বয় সুনিশ্চিত করনের জন্য আইন কানুন আধুনিকায়ন করতে হবে এবং যারা প্রয়োগ করবেন তাদের আরো বেশি ভূমিকা রাখতে হবে৷

তারা বলেন, পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানি আসুক তা সকলেরই কাম্য৷ বাংলাদেশ উদীয়মান অর্থনীতির দেশ৷ সব নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি সমন্বিতভাবে কাজ করে তাহলে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে৷ এছাড়াও অটোমেশন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পুঁজিবাজারকে তুলে ধরা এবং সার্ভেইল্যান্স ব্যবস্থাকে আরও জোরদারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন৷ এসব ব্যবস্থায় বাজারের প্রতি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে, বাজার হবে আরও বিনিয়োগ-বান্ধব৷ পরে বৈঠকে এক প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ডিএসই’র মহাব্যবস্থাপক মোঃ ছামিউল ইসলাম ডিএসই টাওয়ারের উপর সংক্ষিপ্ত বিবরণী উপস্থাপন করেন।

তিনি উল্লেখ করেন ডিএসই’র এই ভবনে ১৩টি ফ্লোরে ৬৫৪,৯৫৪ স্কয়ার ফিট অফিস স্পেস এবং ৩টি বেজমেন্ট ৪০০টি গাড়ী পার্কিং সুবিধা, কেন্দ্রিয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবনটিতে রয়েছে পরিপূর্ণ জেনারেটর ব্যবস্থা৷ এই ভবনটিতে ২০০টির বেশি ব্রোকারেজ হাউজের জন্য অফিস স্পেস সহ ব্যাংক, বীমা এবং সিসিবিএল এর অফিসের জন্য জায়গা বরাদ্দ রয়েছে৷ এছাড়াও ভবনটিতে ৫৮০০ বর্গফুটের ৬৫০ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি মাল্টিপারপাস হলরুম রয়েছে৷ একটি হেলিপ্যাড সহ ভবনটিতে রয়েছে ১৩টি লিফট, ২টি পানির পাম্প৷

তার আগে ডিএসইর চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কমিশনারবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই পুঁজিবাজারের প্রসারতা বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ পুঁজিবাজারের পরিধি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মতিঝিল অফিসে সকল সুযোগ সুবিধার সংকুলান না হওয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ঢাকায় এক খন্ড প্লট বরাদ্দের আবেদন করেন৷

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদুরপ্রসারী উন্নয়ন কল্পে এবং আন্তর্জাতিক মানের স্টক এক্সচেঞ্জ হিসাবে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে ১৯৯৭ সালে ঢাকার নিকুঞ্জে নাম মাএ মুল্যে ৪ বিঘা জমি বরাদ্দ দেন৷ এই বরাদ্দকৃত জায়গায় ডিএসই’র নিজস্ব অর্থায়নে অত্যাধুনিক সুযোগ সম্বলিত ডিএসই টাওয়ার নির্মিত হয়েছে৷

জনাব রহমান আরও বলেন যে, একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী নতুন প্রযুক্তি স্থাপনে সম্ভাবনার নতুন যুগে প্রবেশ করার জন্য ১৯৯৮ সালে পুঁজিবাজারে অটোমেশন পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয় ডিএসই৷ অটোমেশন চালুর জন্যও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তত্কালীন বিএসআরএস ৮ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা সহজ শর্তে ঋণ বরাদ্দ দেয়৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় পুঁজিবাজারের আধুনিকায়নে ১৯৯৮ সালে স্বয়ংক্রিয় লেনদেন পদ্ধতি চালু করার ক্ষেত্রে সহজ অর্থায়নের জন্য দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আজ বিশ্বের অন্যান্য স্টক এক্সচেজ্ঞের সাথে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করে৷

এছাড়া ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন যে, বর্তমান কমিশন যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন যখন কভিড-১৯ এর কারণে পুঁজিবাজার বন্ধ ছিল৷ অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের ছিল দীর্ঘদিনের আস্থাহীনতা৷ ফলে দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই কঠিন চ্যালেঞ্চের মুখে পড়তে হয়েছে৷ নতুন কমিশন দায়িত্ব নেবার পর বাজারবান্ধব পদক্ষেপের ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে৷

আর এর ফলে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে৷ দেশের পুঁজিবাজার নতুন রুপে এবং নতুন আঙ্গীকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় পুঁজিবাজারে পরিণত হয়েছে। আজ আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও প্রথমবারের মত নির্মিত ডিএসই টাওয়ারে ঢাকা স্টক একচেঞ্জ অফিস, আপনি এবং আপনার কমিশনারবৃন্দ পরিদর্শনে এসেছেন৷ এজন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান৷

বিএসইসি’র নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, সিকিউরিটিজ আইনের প্রয়োগ, আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া, মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির আইপিও দ্রুত অনুমোদন, প্রশ্নবিদ্ধ আইপিও আবেদন বাতিল, আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর মতো বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।

এতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বে পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির উপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে বিশ্বের সেরা পুঁজিবাজারের স্থান দখল করেছে বাংলাদেশ।