দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৯ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে মুনাফা করা ৩ কোম্পানিও রয়েছে। সম্প্রতি পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৯টির পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময় (৩১ অক্টোবর) শেষেও কোন কোন কোম্পানির পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এতে করে ‘নো’ ডিভিডেন্ডের কোম্পানির সংখ্যা বাড়তে পারে।

করোনা মহামারিতে ব্যবসায় ধসের কারনে কিছু কোম্পানি এ বছর প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপরেও বিনিয়োগকারীরা পর্ষদের ‘নো’ ডিভিডেন্ডকে মানতে পারছেন না। তাদের মতে, এর আগে নিয়মিত মুনাফার একাংশ দিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো হয়েছে, তাহলে এখন বিনিয়োগকারীদের দূরাবস্থার সময় রিজার্ভ থেকে লভ্যাংশ দিতে পারবে না কেনো। করোনায় শুধু কোম্পানির ব্যবসা নয়, বিনিয়োগকারীদের অবস্থাও শোচনীয়। এই দিকটাও কোম্পানিগুলোর পর্ষদের ভাবা দরকার ছিল।

তথ্যমতে, সমাপ্ত অর্থবছরে ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ইপিএস লোকসান ১২৬.৩৯, শ্যামপুর সুগার ইপিএস লোকসান ২২১.৩৮ টাকা, জিল বাংলা সুগার ইপিএস লোকসান ৯৩.৬৯, জুট স্পিনার্স ইপিএস লোকসান ৪৫.৪৩, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর ইপিএস লোকসান ৩২.৩৫, জেমিনি সী ফুড ইপিএস লোকসান ৯.৮৩, সিভিও পেট্রোকেমিক্যালস ইপিএস লোকসান ০.৫১,

সেন্ট্রাল ফার্মা ইপিএস লোকসান ৯.২৮, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স ইপিএস লোকসান ৯.২০, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইপিএস লোকসান ৭.৫২, উসমানিয়া গ্লাস ইপিএস লোকসান ৭.২১, আরামিট সিমেন্ট ইপিএস লোকসান ৬.৮৬, সাফকো স্পিনিং ইপিএস লোকসান ৫.৬৯, জাহিনটেক্স ইপিএস লোকসান ৩.৭৭, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ইপিএস লোকসান ৩.৭২, জাহিন স্পিনিং ইপিএস লোকসান ৩.৩৯,

তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ ইপিএস লোকসান ২.৮৭, মালেক স্পিনিং ইপিএস লোকসান ১.৬৮, দুলামিয় কটন ইপিএস লোকসান ১.২৮, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ ইপিএস লোকসান ১.১৬, আরএন স্পিনিং ইপিএস লোকসান ০.৮৮, সায়হাম টেক্সটাইল ইপিএস লোকসান ০.৮৬, সায়হাম কটন ইপিএস লোকসান ০.৬৪, অলিম্পিক এক্সোসরিজ ইপিএস লোকসান ০.৫২,

মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ ইপিএস লোকসান ০.৩০, ফেমিলিটেক্স ইপিএস লোকসান ০.১৫ টাকা। এছাড়া মুনাফায় থাকার পরেও ডিভিডেন্ড না দেয়া ৩ কোম্পানি হচ্ছে- জেনারেশন নেক্সট ইপিএস ০.০১ টাকা, বেঙ্গল উইন্ডসোর ইপিএস ০.১২ টাকা, গোল্ডেন হার্ভেস্ট ইপিএস ০.০৪ টাকা।

এ বিষয়ে গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, গেল কয়েক মাসে করোনা পরিস্থিতির কারণে কোম্পানিকে অনেক বাড়তি চাপ নিতে হয়েছে। অনেক ডিস্ট্রিবিউটর হারিয়ে গেছে, ফ্রিজ বন্ধ হয়েছে যাতে অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কোম্পানির বিক্রি গেল বছরের তুলনায় ৪ কোটি টাকা কমে গেছে।

ইপিএস মাত্র ৪ পয়সা হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে কোম্পানি জানায়, করোনার কারণে কোম্পানির বিক্রি ৫০ শতাংশ এর নিচে নেমে গিয়েছিল। গোল্ডেন হার্ভেস্টের আইসক্রিমের সবচেয়ে বড় ব্যবসা হয় মার্চ মাস থেকে। কিন্তু চলতি মার্চ মাস থেকেই করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যেখানে মার্চ থেকে জুন এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি আয় হয় সেখানেই এ সময়গুলোতে আইসক্রিমের ব্যবসা শুণ্যের কোটায় নেমে আসে।

স্কুল-কলেজ বন্ধ, অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে কোম্পানির ফ্রোজেন ফুডের বিক্রিও ৫০ শতাংশ এর নিচে নেমে গেছে। এই তিন মাসে যে পরিমাণ লোকসান হয়েছে তা আগের ৯ মাসের আয়ের সঙ্গে সমন্বয় হয়ে ইপিএস এতো কম হয়েছে। তবে করোনাকালীন সময়ে ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তেহারি, মোরগ-পোলাও জাতীয় ইত্যাদি রেডি ফুড চালু করেছে।

রাইট শেয়ারের অর্থ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনো তারা রাইটের টাকা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারিনি। রাইটের টাকা ব্যবহারের মাধ্যমে যে রিটার্ন আসবে সেটা এখনো শুরু হয়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভালো, করোনার দোহায় দিয়ে কোম্পানি কতৃপক্ষ যা করছে তা অমানবিক। এ ২৯ কোম্পানির ডিভিডেন্ড না দেয়াটা সন্দেহজনক। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ এসব কোম্পানি কেন ডিভিডেন্ড দিলোনা তা সঠিক ভাবে তদন্ত করা। সঠিক তদন্ত হলেই কোম্পানিগুলোর আসল রুপ বেরিয়ে আসবে।