দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে অবশেষে দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) থেকে তালিকাচ্যুত রহিমা ফুড করপোরেশনের শেয়ার লেনদেন আজ শুরু হয়েছে। সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী সিটি গ্রুপের তত্ত্বাবধানে কোম্পানিটি শিগগিরই পুনরায় উৎপাদনে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য কোম্পানিটি সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুনেই উৎপাদনে ফিরবে কোম্পানিটি।  বিষয়টিকে নজরদারি করছে স্বয়ং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতোমধ্যে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক এ সংস্থা।

এদিকে সিটি গ্রুপ দায়িত্ব নেওয়ার পর কোম্পানিটির আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটির অব্যবহৃত সম্পদ বিক্রি করে দায়-দেনা পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করেছে কোম্পানিটি। সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে রহিমা ফুড করপোরেশন আর্থিকভাবে একটি সচ্ছল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি অর্থবছরের জুনের মধ্যেই উৎপাদনে ফিরবে বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহত লোকসান পরিহার করতে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২০১৩ সালের ১৩ জুন উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ব্যবসা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কোম্পানিটি উৎপাদন প্রকৃতি পরিবর্তন করে নারিকেল তেল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য নতুন করে কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এরই ধরাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর কোম্পানিটি পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব নেয় সিটি গ্রুপের সদস্যরা। ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটির নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কোম্পানিটির কারখানার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে মোট ৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৭ হাজার ৪৫৮ টাকা, যা কোম্পানির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানের কারখানটি সম্পূর্ণ স্টিল স্ট্রাকচাররের ওপর নির্মিত হয়েছে। কারখানার যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট এলসি খোলা হয়েছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ের যন্ত্রপাতি সংগ্রহও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির কারখানা পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি তাৎক্ষণিক সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া রহিমা ফুডের নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের যাবতীয় খরচ এ পর্যন্ত নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করা হয়েছে। আর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনে সিটি গ্রুপ সর্বপ্রকার সহায়তা করবে। যন্ত্রপাতি আমদানি হলে চলতি অর্থবছরে ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে বলে মনে করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের আর্থিক ক্ষতি বিবেচনা করে অর্জিত মুনাফা থেকে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছে। যার পরিমাণ ২ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৫১২ টাকা।

এ বিষয় জানতে চাইলে রহিমা ফুডের কোম্পানি সচিব জাকির হোসাইন বলেন, ‘আমরা উৎপানের যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। উৎপাদনে যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় করেছি। পাশাপাশি আমাদের ব্যবসার ধরনেও পরিবর্তন আসবে। আশা করছি, আগামী জুন পর্যন্ত আমরা উৎপাদন শুরু করতে পারব।’

এদিকে রহিমা ফুড নিজের ইচ্ছামতো ডিএসই থেকে তালিকাচ্যুত হয়েছিল কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কোনো ইচ্ছা ছিল না। ডিএসই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল কবে নাগাদ উৎপাদনে যাব। জবাবে বলেছিলাম, একটু সময় লাগবে। এরপর ডিএসই আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। কোম্পানিটিকে তালিকাচ্যুত করেছে।’

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটি উৎপাদনে এসে ব্যবসার ধরন কিছুটা পরিবর্তন হবে। এই প্রতিষ্ঠানটি আগে পামঅয়েল এবং সয়াবিন তেল উৎপাদন করত। ইতোমধ্যে এই উৎপাদন বন্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ভবিষ্যতে এ দুটি পণ্য আর উৎপাদন করার ইচ্ছা নেই কোম্পানিটির। এর পরিবর্তে তারা নারকেল তেল উৎপাদন করবে। তারা এভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, রহিমা ফুড করপোরেশন একটি ভোজ্য তেল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কোম্পানি। ১৯৯৭ সালে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের এ কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (অইপিও) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ রহিমা ফুডকে তালিকাচ্যুত (ডিলিস্ট) করে। তবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ রহিমা ফুডকে তালিকাচ্যুত না করে লেনদেন স্থগিত রেখেছে। সিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ১৭৫ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়।