মো: তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) স্থগিত রাখার দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারন বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বড় মুলধণী কোম্পানি আইপিওতে পুঁজিবাজারে ব্যাপক তারল্য সংকট দেখা দিবে। ইতিমধ্যে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

তাই বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত রবি’র আইপিও চান না বিনিয়োগকারীরা। আজ ১৬ নভেম্বর মতিঝিলে বিডিবিএল ভবনের সামনে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানব বন্ধনে বিনিয়োগকারীরা এ দাবি জানান।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, দেশের পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড। আগামী ১৭ নভেম্বর এ কোম্পানির আইপিও আবেদন শুরু হবে। কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে অর্থাৎ প্রতিটি ১০ টাকায় ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ইস্যু করে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করবে।

টেলিকম খাতের বৃহৎ কোম্পানি রবি এবং এরকম কোম্পানি বাজারে আসুক তা বিনিয়োগকারীরাও চায়। কিন্তু বর্তমান তারল্য সংকটের বাজারে এ মুহূর্ত্বে রবি’র পুঁজিবাজার থেকে এতো বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হবে সম্পূর্ণ আত্মঘাতী।

এছাড়া ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ এর আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী রবি’র ইপিএস হয়েছে ৪ পয়সা এবং ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস লোকসান ০.১৩ টাকা নিয়ে বাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের কাছে বিপুল পরিমাণ শেয়ার ইস্যুর পর এ কোম্পানির ইপিএস কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই পুঁজিবাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ মূহূর্তে রবির আইপিও আবেদন শুরু না করে আগামী বছর চালু করা উচিত বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।

এ ব্যাপারে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. রুহুল আমিন আকন্দ মানববন্ধনে বলেন, বর্তমান বাজারে রবি’র আইপিও ইস্যুকে কেন্দ্র করে সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রি করে নগদ টাকা হাতে রেখে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদেরও রবি’র আইপিওতে আবেদন করার জন্য বিভিন্ন হাউজ থেকে এক প্রকার চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

যে কারণে বর্তমান বাজারে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এতে সেকেন্ডারি মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই পুঁজিবাজার গতিশীল না হওয়া পর্যন্ত রবি’র আইপিও স্থগিত রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রবি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা পাওয়ারও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। কারন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির মধ্যে গ্রামীণফোনের পরে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে আসছে রবি আজিয়াটা। তবে গ্রামীণফোন ১২ বছর আগে যেটা করতে পেরেছিল, রবি এখনো তা করতে পারেনি। অথচ কোম্পানিটি গ্রামীণফোনের আগে যাত্রা শুরু করেছিল। ২০০৯ সালে গ্রামীণফোন প্রতিটি শেয়ার ৭০ টাকা করে ইস্যু করেছিল। কিন্তু রবি আজিয়াটা এখনো শেয়ারপ্রতি ১ টাকাও পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।

বরং প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর মূল্যায়ন এখনো ঋণাত্মক। রবির প্রসপেক্টাসেই শেয়ার দর মূল্যায়নের এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যেকোন কোম্পানির শেয়ার দর বিবেচনায় ‘হিস্ট্রোরিকাল আর্নিংস বেজড ভ্যালু পার শেয়ার’ পদ্ধতিকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে কোম্পানির শেষ ৫ বছরের ওয়েটেড শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) নির্ণয় করা হয়। যেটাকে শেষ ৩ মাসের গড় মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দিয়ে গুণ করে শেয়ার দর মূল্যায়ন করা হয়। এই পদ্ধতিতে রবির শেয়ার দর মূল্যায়ন হয়েছে ঋণাত্মক ১.৪৭ টাকা।

রবির প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, কোম্পানিটির গত ৫ বছরের ওয়েটেড ইপিএস ঋণাত্মক ০.১৩ টাকা। আর ৩ মাসের গড় পিই ১১.৩২। যা দিয়ে গুণ করলে শেয়ার দর মূল্যায়ন হয় ঋণাত্মক ১.৪৭ টাকা। অর্থাৎ এই পদ্ধতি অনুযায়ি রবি শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে কোন টাকা পাওয়ার যোগ্যতা এখনো অর্জন করতে পারেনি।

শেয়ারবাজারে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে অভিহিত মূল্যে আসা কোন কোম্পানির শেয়ার দর মূল্যায়ন ১০ টাকার নিচে হতে দেখা যায়নি। সব কোম্পানিরই মূল্যায়ন হয়েছে ১০ টাকার উপরে। এছাড়া শেয়ারবাজারের ইতিহাসে ঋণাত্মক শেয়ার দর মূল্যায়ন নিয়ে কোন কোম্পানি অর্থ সংগ্রহ করতে পেরেছে বলে এ বাজারের কেউ মনে করতে পারছেন না।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, টেলিকম খাতের বৃহৎ কোম্পানি রবি পুঁজিবাজারে আসুক সবার প্রত্যাশা। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে রবি আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দেখা দেবে। বর্তমান তারল্য সংকটের বাজারে এ মুহূর্ত্বে রবি’র পুঁজিবাজার থেকে এতো বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হবে সম্পূর্ণ আত্মঘাতী।

এছাড়া ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ এর আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী রবি’র ইপিএস হয়েছে ৪ পয়সা এবং ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস লোকসান ০.১৩ টাকা নিয়ে বাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের কাছে বিপুল পরিমাণ শেয়ার ইস্যুর পর এ কোম্পানির ইপিএস কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই পুঁজিবাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ মূহূর্র্তে রবির আইপিও আবেদন শুরু না করে আগামী বছর চালু করা উচিত বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, রবি বরাবরই লাভজনক কোম্পানি। কোম্পানির ইপিএস দেখে নয়, কোম্পানির ভভিষ্যত দেখে বিনিয়োগ করা উচিত। রবি আইপিও স্থগিত রাখার দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা এ প্রসঙ্গে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। এছাড়া অফিসে এসে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে ফোন কেটে দেন।