তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের মৌলভিত্তি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এর ফলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে তুলনামূলক কম ঝুঁকি থাকে। কিন্তু ২০১০ সালের বাজার ধসের পর থেকেই এ খাতের প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় বিনিয়োগকারীরা। আর ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো এর পর থেকেই বাজার ধসের চাপ সামাল দিতে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে বাজার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে। যার প্রভাবে গত ৫/৬ বছর ধরে ব্যাংক খাতের শেয়ারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছিল। বিশেষ করে ২০১৮ সালের পর থেকে ব্যাংক খাতের শেয়ারে সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে।

তবে ব্যাংক খাতের বড় ঝড়ের মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের হালচাল নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। গত পাঁচ বছর ধরে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ডিভিডেন্ডের ধারাবাহিকতা থাকলেও ইপিএস কমছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৯-২০ সালে সর্বনিন্ম ইপিএস হয়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে এসআইবিলের ইপিএস ছিল ৩ টাকা ১০ পয়সা ২০১৯ সালে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়ায় ১ টাকা ৭১ পয়সা। ব্যাংক খাতের অন্যান্য কোম্পানির ন্যায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ধারাবাহিক গ্রোথ রয়েছে বলে কোম্পানির সচিব আবদুল হান্নান খান মন্তব্য করেন।

তিনি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, আমাদের ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক। তবে অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে আমরা একটু পিছিয়ে থাকলেও ব্যাংকের ধারাবাহিক গ্রোথ রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ভাল হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে ব্যাংকিং খাতে। ব্যাংক খাতের এ অবস্থা থাকলে সামনে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো কিছু চেষ্টা করবো। ২৫ বছর পেরিয়ে আমরা ২৬ বছর পা রেখেছি। এটা সম্পুর্ন অবদান গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের। আমাদের উপর শেয়ারহোল্ডাদের আস্থা রয়েছে। তবে করোনা প্রভাবে কিছু ব্যাংকিং খাতে ধাক্কা লাগছে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে পুঁজিবাজারে দুরবস্থায় পড়েছে ব্যাংকিং খাত। ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। আগে যেখানে মোট পুঁজিবাজার মূলধনের ৪০ ভাগের ওপরে দখলে ছিল এ খাতের, এখন সেটা কমতে কমতে ২০ ভাগের নিচে নেমে গেছে। শুধু তা-ই নয়, অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে গেছে কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ার। ব্যাংকিং খাতের এ দুরবস্থার জন্য এ খাতের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব দেখা দেয়া অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে পুঁজিবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধসের ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই পুরোপুরি বা আংশিক ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাজার ভালো থাকায় যাদের লোকসান ছিল তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন। তবে এর মধ্যে নেই বেশিরভাগ ব্যাংকের বিনিয়োগকারী। অপেক্ষা, লভ্যাংশ সমন্বয় কোনোটাতেই ফল হয়নি। লাভের দেখা মেলেনি এ খাতের বিনিয়োগকারীদের। তবে ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে, এখনও সে প্রত্যাশায় রয়েছেন তারা।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে এমন পোর্টফোলিওতে এখনও লোকসান রয়ে গেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণ করার পর অন্য সব খাত ঘুরে দাঁড়ালেও বিনিয়োগকারী টানতে পারেনি এ খাতের কোম্পানি। তবে সম্প্রতি ধীরে ধীরে এ খাতের শেয়ারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি ব্যাংক শেয়ারে এখন যে চাহিদা রয়েছে, এমন থাকলে তারা লোকসান কাটিয়ে উঠবেন বলে আশাবাদী।

তারা জানান, দর কম থাকলে শেয়ার কিনে সমন্বয় তথা লোকসান পোষানো ব্যাকরণসম্মত উপায় বলে বাজার বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও কার্যক্ষেত্রে এর উল্টোটা ঘটছে। সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে আবারও বিনিয়োগ করেছেন তারা। কিন্তু এখন তাদের লোকসানের অঙ্ক আরও বেড়েছে। কারণ ব্যাংক খাত কখনও দীর্ঘদিন ভালো থাকেনি। সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিন এ খাতটির মোট লেনদেনে ১০ শতাংশের বেশি অবদান দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহের শেষ দিনে যা ২০ শতাংশ ছড়িয়ে যায়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক বিনিয়োগকারীরা লোকসান কাটানোর সুযোগ পাবে।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ২০১০ সালের ধস থেকে বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। তারা যদি সে সময় অতিমূল্যায়িত শেয়ার না কিনতেন, তবে আজ এমন দশা হতো না। বিনিয়োগকারীদের সব সময় একটি কথা স্মরণ রাখা উচিত যে, বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে নতুন-পুরোনো এমন অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যারা না বুঝে অন্যের পরামর্শে বিনিয়োগ করেন। তাদের এমন প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে তিনি মনে করেন।

তাছাড়া পুঁজিবাজারের যেকোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের পূর্বে ওই কোম্পানির সার্বিক অবস্থা জেনে নেয়া উচিত। এ জন্য অবশ্যই কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি), মূল্য আয়ের আনুপাতিক হার (পিই রেশিও) সম্পর্কে জানতে হবে। বিনিয়োগের পূর্বে এসব বিষয় না জানলে কোম্পানিটির প্রকৃত অবস্থা জানতে বা বুঝতে পারবেন না সাধারন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে যে কোম্পানির পিই রেশিও যত কম থাকবে, সেই কোম্পানিটি বিনিয়োগের জন্য তত ভালো।

সাধারনত ৪০ পিই রেশিও স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই মানের উপরে থাকলে সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে গণ্য হবে। পিই রেশিও থেকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য। এই মূল্যটি যত বেশি থাকবে বিনিয়োগের জন্য ততই ভালো। তাই বিনিয়োগের পূর্বে সেই কোম্পানির খুঁটিনাটি ভালোভাবে জানা খুবই জরুরি।

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এসআইবিলের লিমিটেড। এই ব্যাংকটির অনুমোদিত মুলধন ১ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত আয় রয়েছে ৭৯৩ কোটি ২ লাখ টাকা। ব্যাংকটি গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা ১০ পয়সায় উঠানামা করে।

গত ৫ বছরে কোম্পানিটির লভ্যাংশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড, ২০১৬ সালের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ, ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ বোনাস এবং ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ বোনাস, ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ লভ্যাংশ। এর মধ্যে ৫ স্টক ও ৫ শতাংশ ক্যাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। গত ৫ বছরে কোম্পানিটির ইপিএস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ২ টাকা ৯১ পয়সা, ২০১৬ সালে ছিল ৩ টাকা ১০ পয়সা, ২০১৭ সালে ছিল ১ টাকা ৯৮ পয়সা এবং ২০১৮ সালে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ১ টাকা ৯৭ পয়সা ও ২০১৯ সালে ১ টাকা ৭১ পয়সা।

অপরদিকে, গত ৫ বছরের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বা এনএভি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ৪৮ টাকা ৪২ পয়সা, ২০১৬ সালে ১৯ টাকা ২২ পয়সা, ২০১৭ সালে ১৯ টাকা ২১ পয়সা এবং ২০১৮ সালে ছিল ১৯ টাকা ৪৪ পয়সা ও ২০১৯ সালে ছিল ১৯ টাকা ৩৮ পয়সা। বর্তমান কোম্পানিটির পিই রেশিও ৭.৪৩। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মোট শেয়ার সংখ্যা ৯৩ কোটি ৮০ লাখ ৮ হাজার ৪২৪ টি।

এর মধ্যে উদ্যোক্তা বা পরিচালকের হাতে রয়েছে ৩০ দশমিক ০৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৪৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। কোম্পানিটির সর্বশেষ কোয়াটার অর্থাৎ তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২০) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর’২০) কোম্পানির সমন্বিত শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৭৭ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০.৭১ টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১৯.২২ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৭.৫৪ টাকা। এসআইবিএল ব্যাংক লিমিটেড ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

এদিকে আর্থিক সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক উপশাখা স্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ বলে সম্প্রতি একটি দৈনিকের কাছে মন্তব্য করেছেন সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী ওসমান আলী।

তিনি বলেন, দেশের সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর একটি হলো উপশাখা, যার মাধ্যমে একেবারে গ্রামে গিয়ে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা দেয়া যাচ্ছে। এতে গ্রামীণ সেবার বিকাশ আরও দ্রুত ও মজবুত হবে। রবিবার ২৫ বছর পেরিয়ে ২৬ বছরে পা দিয়েছে দ্বিতীয় প্রজন্মের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)।

কাজী ওসমান আলী বলেন, এসআইবিএল এখন সাড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকা সম্পদের একটি ব্যাংক। আমাদের কাছে আমানত হিসেবে জমা আছে গ্রাহকদের ৩১ হাজার কোটি টাকা। আমরা প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা গ্রাহকদের মাঝে বিনিয়োগ করেছি। বস্ত্র, তৈরি পোশাক, জ্বালানি, বিদ্যুত, ভারি শিল্প, কৃষি, এসএমইসহ দেশের প্রত্যেকটি সম্ভাবনাময় শিল্পে এসআইবিএল বিনিয়োগ করেছে।

দেশব্যাপী ১৬১টি শাখা, ৫৪টি উপশাখা, ১৩৩টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, ১৪০টি এটিএমবুথ এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল এ্যাপসহ প্রযুুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই বিপুলসংখ্যক গ্রাহকই আমাদের মূল শক্তি। তাদের সন্তুষ্টিই আমাদের বড় অর্জন। এই দীর্ঘযাত্রায় দেশীয় শিল্প বিকাশ, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার, এসএমই উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানি, রফতানি ও রেমিটেন্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

এসআইবিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের স্বল্প মুনাফায় বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করেছি। প্রবাস ফেরতদের জন্য প্রবাসী অগ্রযাত্রা ও প্রবাসী উদ্যোগ নামে চালু করেছি বিশেষ দুইটি পুনর্বাসন বিনিয়োগ প্রকল্প। বিদেশ ফেরত প্রবাসীগণ ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষিভিত্তিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য জামানতবিহীন ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে দেশের অভ্যন্তরেই নিজেকে সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারবেন এই প্রকল্পসমূহের আওতায়।