স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম: দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ীভাবে জমা আছে ৪৫১ কোটি টাকা। এ আয়ের ওপর ভর করেই নিট মুনাফায় চলে সিএসই। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে সুদ আয় কমে যাওয়ায় নিট মুনাফা কমেছে সাত কোটি ১৮ লাখ টাকা। সিএসইর বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এমন তথ্য।

সর্বশেষ অর্থবছরে (২০১৯-২০) সিএসইর নিট মুনাফা হয় ৩১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরে ছিল ৩৯ কোটি ছয় লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা কমে সাত কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিএসইর সুদ আয় হয় ৩৯ কোটি ৯ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ সুদ আয় কমেছে আট কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ সুদ আয় কমার সরাসরি প্রভাব পড়েছে সিএসইর মুনাফায়।

জানা গেছে, সিএসইর মুনাফার বড় উৎস হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা এফডিআরের সুদ। বর্তমানে সিএসইর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে সাড়ে ৫০ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংকে ৫০ কোটি, ব্যাংক এশিয়ায় ৫০ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংকে ৫০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংকে ৫০ কোটি, সীমান্ত ব্যাংকে ৫০ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকে ৩৪ কোটি এবং সিটি ব্যাংকে ২৬ কোটি টাকা এফডিআর রয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৯১ কোটি টাকা।
এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ৩৩১টি নিবন্ধিত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ছিল।

এসবের শেয়ার ও ইউনিট ফান্ডের মোট ১৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার হাতবদল হয়, যার বাজারমূল্য ছিল পাঁচ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ এটি ছিল আট হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে লেনদেন কম হয়েছে তিন হাজার ১৭৩ কোটি টাকার। লেনদেন কমায় এ খাত থেকেও কমিশন বাবদ আয় কিছুটা কমেছে।

আবার সিএসইতে লেনদেনের সঙ্গে কমেছে বাজার মূলধনও। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল দুই লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছর ছিল তিন লাখ দুই হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাজার মূলধনও কমেছে ৫৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এর প্রভাব পড়েছে সংস্থাটির আয়ের ওপর।

তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিএসইর পরিচালন আয় হয় ৩৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ সময়ে পরিচালন ব্যয় হয় ২৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এতে সংস্থাটির পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ছয় কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

সিএসইর একাধিক ট্রেকহোল্ডার বলেন, এক দশক আগেও পুঁজিবাজারের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশ মার্কেট শেয়ার ছিল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই), যা ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষে হয়েছে ছয় দশমিক ৬২ শতাংশ। পুঁজিবাজারের বাজার অংশীদারিত্বে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) অংশ বাড়লেও কমছে সিএসইর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএসইর এক সাবেক পরিচালক বলেন, সিএসইর অপারেশনাল ইনকামের চেয়ে ব্যাংক সুদের আয় প্রায় ছয়গুণেরও বেশি। অর্থাৎ সিএসইর নিট মুনাফা হয় ব্যাংক সুদ আয় থেকে। তবে ব্যাংক সুদ বাবদ আয় কেন কমল, তা পরিষ্কার নয়।

এ বিষয়ে সিএসইর কোম্পানি সচিব রাজিব সাহা বলেন, ‘সিএসইর পরিচালন মুনাফা কিন্তু আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে করোনার প্রভাবে প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। কারণ প্রায় ৬৬ দিন তো ট্রেড বন্ধ ছিল। আশা করছি চলতি বছরে এ আয় আরও বাড়বে। তবে ব্যাংকে থাকা অর্থের সুদও তো আমাদের লাভের অংশ। আর এটা দিয়েই তো আমরা শেয়ারহোল্ডাদের লভ্যাংশ দিয়েছি।’