দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার। তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের দুই বছর পূর্তি হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। আর এই দ্বিতীয় বছর পূর্তি হবার আগেই মন্ত্রী সভার সদস্যদের সম্পদের হিসেব নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেই শপথ নেয়ার আগেই তিনি বলেছিলেন মন্ত্রীদের হিসাব নেয়া হবে। এরপর থেকেই মন্ত্রীদের সম্পদের হিসেব তিনি একাধিক পন্থায় সংগ্রহ করছেন। কিন্তু যেহেতু এটি তিনি মন্ত্রীদের কার্যক্রম বিবেচনার জন্য সংগ্রহ করছেন তাই এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না।

এখন মন্ত্রীদের কার্যকালের দ্বিতীয় বছরে এই তালিকা এবং মন্ত্রীদের সম্পদের হিসাবগুলো আবার নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, একাধিক পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী এই তালিকা সংগ্রহ করেন। এরপর মন্ত্রীদের কাছ থেকেও তাদের সম্পদের হিসেব চাওয়া হবে। যে পদ্ধতি গুলো দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্পদের হিসাব গ্রহণ করছে তারমধ্যে রয়েছে:-

প্রথমত, আয়কর বিভাগ: প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাইছেন যে কারা কারা মন্ত্রী সভার সদস্য হবার আগে তারা আযকর রির্টানে কি জমা দিয়েছিলেন এবং কি সম্পদের বিবরণ দিয়েছিলেন। এখন তাদের সম্পদ কতটুকু বেড়েছে বা কমেছে।

দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব সূত্র এবং উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন: সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে, কোন মন্ত্রীর আর্থিক অবস্থা কি এবং তিনি মন্ত্রী হবার আগে কি ছিলেন, এখন তার অবস্থার কি পরিবর্তন হয়েছে।

তৃতীয়ত, গোয়েন্দা তথ্য: গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মন্ত্রীদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখেন। মন্ত্রীদের সম্পদ বেড়েছে বা কমেছে এ সম্পর্কে নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে থাকে।

চতুর্থত, সরাসরি মন্ত্রীদের কাছ থেকে তথ্য: এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি মন্ত্রীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন যে তাদের আর্থিক অবস্থা মন্ত্রী হবার আগে কি ছিল এখন আর্থিক অবস্থার কি পরিবর্তন হয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে যে, মন্ত্রীদের বিভিন্ন তথ্য এবং অন্যান্য সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে একটি চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রীদের সম্পদের হিসেব নেয়া হবে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে না। এটি প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের পারফরমেন্স ভবিষতে তারা দল এবং সরকারে তাদের ভুমিকা কি হবে ইত্যাদি বিবেচনার জন্য ব্যবহরিত হবে।

অবশ্য আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সব জানেন এবং বোঝেন। কোন মন্ত্রী কি করছেন সে সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তের খবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছে যায়। কাজেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের সম্পদের হিসেব ঘটা করে চাওয়ার কিছু নেই। তবে এটির মূল দিক হলো প্রধানমন্ত্রী আসলে মন্ত্রীদের কাছ থেকেই একটি স্বীকারোক্তি জানতে চান এখন তাদের অবস্থা কি?

আর একারণেই এখন মন্ত্রীরাও আগের চেয়ে অনেক শতর্ক হয়ে যাচ্ছেন এবং কিছু কিছু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ এবং দুর্নীতির অভিযোগ আছে, সে সমস্ত অভিযোগ নিয়ে ওই মন্ত্রীরাও একটু উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক বার্তা জানিয়ে দিয়েছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।