মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনার প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত দেশের নির্মাণ খাতের প্রধান উপকরণ সিমেন্ট শিল্প। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রভাবে ৯০ শতাংশ কারখানা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দরে আটকে ছিল এ খাতের কাঁচামালের জাহাজ। ফলে করোনা ভাইরাসে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে সিমেন্ট শিল্প। এছাড়া গত দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের দাম বাড়তি। এতে আগে থেকেই সিমেন্ট খাত লোকসানের মুখোমুখি। এর মধ্যে অনেকটা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এল করোনাভাইরাস।

সব মিলিয়ে সিমেন্ট কোম্পানিগুলোতে নগদ অর্থের সরবরাহ একেবারেই কমে গেছে।  কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। পাশাপাপাশি অন্যান্য নিয়মিত খরচও আছে। সিমেন্টের কাঁচামাল প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এ পর্যন্ত যত ঋণপত্র খোলা হয়েছে, তা–ও এখন বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি মো. আলমগীর কবির।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৭টি সিমেন্ট খাতের কোম্পানি। করোনা মোকাবেলা করে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০, প্রান্তিকে মুনাফা করেছে ৪টি কোম্পানি। আর তাতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে মুনাফা বেড়েছে ৩টি সিমেন্ট কোম্পানির। কোম্পানিগুলো হলো-লাফার্জ হোলসিম বাংরাদেশ লিমিটেড, প্রিমিয়ার এবং মেঘনা সিমেন্ট লিমিটেড।

বিদায়ী প্রান্তিকে তিন কোম্পানি মোট ১৫৯ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুনাফা করেছে।এ ছাড়াও এমআই সিমেন্ট মুনাফা করেছে, তবে আগের বছরের চেয়ে কিছু কম। আর বাকি তিন কোম্পানির মধ্যে লোকসান কমিয়েছে হাইডেলবার্গ, আরামিট সিমেন্ট লিমিটেড। অন্যদিকে কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেড সর্বশেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছরের জুলাই-৩০ সেপ্টেম্বর এই প্রান্তিকে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড ১৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুনাফা হয়েছে। এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ২৯ পয়সা।

একই সময়ে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের মুনাফা হয়েছে ৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফলে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৮১ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৪১ পয়সা।

মেঘনা সিমেন্ট মিলস লিমিটেড প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই’২০-সেপ্টেম্বর’২০) মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তাতে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪৮ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৩৬ পয়সা।

এদিকে, এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড (ক্রাউন সিমেন্ট) শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫১ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৫৭ পয়সা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৪৭ টাকা ৬ পয়সা। জুলাই-৩০ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফা হয়নি তবে লোকসান কমিয়ে আনছে হাইডেলবার্গ ও আরামিট সিমেন্ট।

এর মধ্যে আরামিট সিমেন্টের প্রথম প্রান্তিকে লোকসান হয়েছে ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১টাকা ৩২ পয়সা। একই সময়ে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ার প্রতি কনসুলেটেড লোকসান হয়েছে ৪৮ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ২ টাকা ৫৩ পয়সা।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, নানা কারণে সম্প্রতি মুনাফা নগণ্য পর্যায়ে চলে এসেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান লোকসান দিয়ে ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছে।বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, নানা কারণে সম্প্রতি মুনাফা নগণ্য পর্যায়ে চলে এসেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান লোকসান দিয়ে ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছে।