দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আরও একটি আর্থিক প্রণোদনা পরিকল্পনা তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার দুপুরে গণভবনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) চূড়ান্তকরণ সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন।

উপ-প্রেস সচিব বলেন, সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় আর্থিক প্রণোদনার একটি পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে করোনাভাইরাস মহামারির শুরুর দিকে গত মার্চে সরকার সোয়া লাখ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই অংক জাতীয় বাজেটের এক-পঞ্চমাংশের বেশি, মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সরকারের গঠিত ওই তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন দিয়েছেন মালিকরা। পাশাপাশি বড় শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রের জন্যও ছিল এই ধরনের তহবিল বরাদ্দের সুযোগ। এবার করোনা দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার।

আজকের সভায় সকলের সঙ্গে সমৃদ্ধির পথে’স্লোগানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২১-২০২৫) চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। আগামী একনেক সভায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগভিত্তিক পরিকল্পনাগুলো দেখেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার স্ট্যাট্রেটিজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান আলাদাভাবে হাইলাটস করতে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান।

দ্বিতীয় প্রণোদনা আসতে পারে, এমন খবরের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দূরদর্শী ও বিচক্ষণ একজন মানুষ। তিনি দেশের ১৮ কোটি মানুষ এবং ব্যবসায়ী মহলের অভিভাবক হিসেবে দুর্যোগ মোকাবেলায় কখন কী করতে হবে তিনি ভালো জানেন।’

তিনি বলেন, ‘করোনার প্রথম ঢেউ যখন শুরু হয়েছিল তখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রণোদনা চাইতে হয়নি। তিনি নিজেই বাস্তবতা অনুধাবন করে তার বিচক্ষণতা দিয়ে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এর সুফল দেশ ও দেশের অর্থনীতি পেয়েছে। ‘এখন আবার করোনার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি ওয়াকিবহাল। ব্যবসায়ীরা এবারও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রণোদনা চাননি। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছেন এখন কী করা উচিত। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতি সুরক্ষিত থাকবে।’

সভায় ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাব জেলে বন্দী থাকার সময় জেলে বসে দেশের উন্নয়নের জন্য রোডম্যাপ তৈরির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরির পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের পণ্যের বাজার সম্পাসারণে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দেন শেখ হাসিনা।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির, পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।