তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজের ইঙ্গিতে দেশের পুঁজিবাজার নতুন করে চাঙ্গা হতে শুরু করছে। যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে।মুলত নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আস্থায় ডিএসইতে লেনদেন ৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার একের পর এক সিদ্ধান্তে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়ার কারন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া পুঁজিবাজারের বিষয় সরকারের নানামুখী সিদ্ধান্ত ও দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজের ইঙ্গিতে ১৬ মাস আর লেনদেন চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে।

এছাড়া মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আরও একটি আর্থিক প্রণোদনা পরিকল্পনা তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার দুপুরে গণভবনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) চূড়ান্তকরণ সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন।

উপ-প্রেস সচিব বলেন, সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় আর্থিক প্রণোদনার একটি পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে করোনাভাইরাস মহামারির শুরুর দিকে গত মার্চে সরকার সোয়া লাখ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই অংক জাতীয় বাজেটের এক-পঞ্চমাংশের বেশি, মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সরকারের গঠিত ওই তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন দিয়েছেন মালিকরা। পাশাপাশি বড় শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রের জন্যও ছিল এই ধরনের তহবিল বরাদ্দের সুযোগ। এবার করোনা দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার।

এদিকে গত সপ্তাহের অধিকাংশ কার্যদিবস শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। সূচকের সাথে লেনদেনও বেড়েছে শেয়ারবাজারে। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিনিয়োগকারীরা সপ্তাহটিতে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে।

জানা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ১৬ হাজার ৯৪৭ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি ৫৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বিনিয়োগকারীরা ৮ হাজার ৮৪৭ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার টাকা মূলধন ফিরে পেয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

বিদায়ী সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৫ হাজার ৬২৩ কোটি ৭৫ লাখ ৯৮১ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার ৫৬৭ টাকা বা ৫৩.৬৬ শতাংশ বেশি হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৬৫৯ কোটি ৮২ লাখ ৯২ হাজার ৪১৪ টাকার।

ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২৪ কোটি ৭৫ লাখ ১৯৬ টাকার। আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছিল ৯১৪ কোটি ৯৫ লাখ ৭৩ হাজার ১০৩ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে গড় লেনদেন ২০৯ কোটি ৭৮ লাখ ২৭ হাজার ৯৩ টাকা বেশি হয়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১০.৩৩ পয়েন্ট বা ২.১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২১৮.৩৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২৩.৫৮ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৭৮.১২ পয়েন্ট বা ৪.৩৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২০৩.৬৭ পয়েন্টে এবং ১৮৭৬.৭৪ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৬৪টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৯টির বা ২৯.৯৫ শতাংশের, কমেছে ১৯৩টির বা ৫৩.০২ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬২টির বা ১৭.০৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২৩২ কোটি ৪০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭৯ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২১৩ কোটি ৫২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৪০ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ১৮ কোটি ৮৮ লাখ ১২ হাজার ৭৩৯ টাকা বা ৮.৮৪ শতাংশ বেড়েছে।

সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩১৯.২৭ পয়েন্ট বা ২.১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৮৯.৩০ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ১৯৮.৯৮ পয়েন্ট বা ২.২৫ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ২৫২.৯৮ পয়েন্ট বা ২.১৪ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ৩৯.০১ পয়েন্ট বা ৩.৬৫ শতাংশ এবং সিএসআই ১৯.১০ পয়েন্ট বা ১.৯৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯ হাজার ৩৬.৫৪ পয়েন্টে, ১২ হাজার ৫৮.৪৭ পয়েন্টে, ১ হাজার ১০৯.১৭ পয়েন্টে এবং ৯৯০.২২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩১৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১০৪টির বা ৩২.৯১ শতাংশের দর বেড়েছে, ১৫২টির বা ৪৮.১০ শতাংশের কমেছে এবং ৬০টির বা ১৮.৯৮ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।