দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেছেন, অনেক উত্থান পতনের পর শেয়ারবাজার আজ আস্থা ও গতিশীল বাজারে পরিণত হয়েছে৷ এই গতিশীলতার পেছনে মুলত ৬ টি কারন রয়েছে, প্রথমত বর্তমান সরকারের শেয়ারবাজার বিষয়ক নীতি সহায়তা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক ভূমিকা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা,

স্টক এক্সচেঞ্জের নিরলস প্রচেষ্টা, বাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষসমূহের একাগ্রতা ও নিষ্ঠা এবং বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ও প্রজ্ঞা রয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে ডিএসইর লেনদেন ১ হাজার পাঁচশত কোটি টাকা অতিক্রম করেছে৷ সোমবার ডিএসইর ৫৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তিনি এ কথা বলেন। সভাটি ডিজিটাল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়।

অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির চিত্র ও পরিবেশ বিনিয়োগ বান্ধব উল্লেখ করে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে৷ দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে।

করোনা পরিস্থিতিতে দুই মাস বন্ধ থাকায় শেয়ারবাজার সামগ্রিক চিত্র পাল্টে যায় উল্লেখ করে মো: ইউনুসুর রহমান বলেন, আমার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ডিজিটাল প্লাটফর্মে কাজ শুরু করি৷ অনেক বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও পরিচালনা পর্ষদ ডিএসই’র আয়ের খাতসমূহে বৈচিএ আনতে বহুবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে আমাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দক্ষ বিনিয়োগকারী গড়ে তোলার পাশাপাশি স্মার্ট, ত্রুটিহীন ট্রেডিং প্লাটফর্ম প্রদানের মাধ্যমে এর ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করা।

শেয়ারবাজারের সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সাথে তাল মিলিয়ে ডিএসইর লেনদেন ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশনের ওপর ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷ বাজারের গতিকে ধরে রাখতে পণ্যের বৈচিত্র আনয়নে-অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড, এসএমই, Fixed Income Securities (Treasury bond, Treasury bill) করপোরেট বন্ড নিয়ে ডিএসই কাজ করছে৷ ইতোমধ্যে উন্নত বিশ্বের স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে তাল মিলিয়ে ডিএসই প্রি-পেনিং ও পোষ্ট ক্লোজিং সেশনও চালু করেছে৷

ইউনুসুর রহমান বলেন, ডিএসই থেকে ৫টি ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে এপিআই ইউএটি সংযোগ প্রদান করা হয়েছে৷ এতে অচিরেই এই সকল কোম্পানি নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) এর মাধ্যমে সরাসরি ট্রেডিং কার্যক্রম চালু করতে পারবে৷ এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে সকল ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে এ সুযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে৷ এছাড়াও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠিত ও নিবন্ধিত হওয়ায় এর পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে এবং পর্ষদের অধিনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে৷

ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, সরকার একটি গতিশীল শেয়ারবাজার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে উদ্যোগী বিনিয়োগকারীগণ ট্রেডিং ফ্লোরে সক্রিয় থাকায় ডিএসই চমৎকার লেনদেন পর্ব উপভোগ করছে৷ এছাড়াও নিম্ন সুদের হার, ক্রমবর্ধমান রফতানি ও রেমিট্যান্স এবং তুলনামুলক অর্থনৈতিক সক্রিয়তার ফলে ডিএসই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে৷

এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতিতে ৩০ জুন ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীর প্রতিবেদন, নিরীক্ষকবৃন্দের প্রতিবেদন, নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী গ্রহণ, বিবেচনা ও সর্বসম্মতিভাবে অনুমোদিত হয়। সমাপ্ত অর্থবছর পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশকৃত ৩ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। পরবর্তী অর্থবছরের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ ও তাঁদের পারিতোষিক নির্ধারণ করা হয়। সভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত মোঃ সিদ্দিকুর রহমানকে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।

সভায় মোঃ শহীদুল্লাহ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসেন, শ্যামল ইকু্ইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাজেদুল ইসলাম, এন.এল.আই সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহেদ ইমরান, মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরীন, ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদেক,

রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী, প্রুডেনশিয়াল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদুল হক, বুলবুল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস শাহুদুল হক বুলবুল এবং গ্রীনল্যান্ড ইকুইটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রাজিব আহসান, ডিএসইর পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান এবং নব নির্বাচিত পরিচালক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন