দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে রিং সাইন টেক্সটাইলের ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে লেনদেনে আসার আগেই রিং সাইনের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। এ কারণে কোম্পানির আইপিও বন্ধ করতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন আহ্বান জানিয়েছিল। তবে এ আহ্বানে সাড়া দেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জ। এদিকে, আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা নেয় রিং সাইন। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

২০১৫ সালের বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস অনুযায়ী, রি সাইন টেক্সটাইল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে এবং আইপিওর অনুমোদনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে, সেগুলোর সার্বিক তথ্য উপাত্ত ব্যাখ্যা দিয়ে একটি প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দ্রুত দাখিল করার জন্য বিএসইসিকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিএসইসিকে পাঠানো হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন রিং সাইনের আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ করেছে। কোম্পানিকে যখন আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়, তখনই এ অভিযোগ উঠে। অভিযোগের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) দাখিল করা হয়। ওই সময় ই-নথির মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত এসব বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিএসইসির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু বিএসইসি ব্যাখ্যা দিতে বিলম্ব করে। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে মন্ত্রণালয়।

বিএসইসি সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রিং সাইনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কমিশন বিষয়টির ব্যাখ্যা প্রস্তুত করছে। সময় মতো বিএসইসি তাদের অবস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে স্পষ্ট করবেন।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, রিং সাইনের বিষয়ে মন্ত্রণালয় নানা তথ্য চেয়েছে। কমিশন সেগুলো প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

জানা গেছে, কোম্পানির আইপিওতে আসার আগে ২০১৩ সালে ১৩৭ কোটি টাকার মূলধন ছিল। প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানি ১৪৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। পরবর্তীতে আইপিওর মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। অর্থাৎ ১৩৭ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি ২৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে নিয়েছে। আর এর পেছনে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে।

কোম্পানির প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছে, টেক্সটাইল শিল্প খাতে গড়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কোম্পানির সক্ষমতা অনেক কম। এরপরও কোম্পানি শত শত কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করেছে। লেনদেন শুরুর কিছুদিন পরই কোম্পানির শেয়ার দর ফেস ভ্যালুর নিচে চলে যায়। যা দীর্ঘদিনেও ফেসভ্যালুকে স্পর্শ করতে পারেনি।

এতে বিনিয়োগকারীরা লোকসানে পড়েছে। তাছাড়া তালিকাভুক্তির এক বছর না পেরোতেই কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে কোম্পানির আয়েও বড় ধরনের ধ্বস নেমেছে। শুধু তাই নয় কোম্পানিটি তালিকাভুক্তি হওয়ার পর মাত্র ২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে শেয়ারহোল্ডারদের।

২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৯ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৩৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৭২ পয়সা এবং এনএভি ২৪ টাকা ৮৮ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ৭৬ শতাংশ।

কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫৪০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। শেয়ার সংখ্যা ৫০ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩ টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের কাছে ৩১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাচে ৫১ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার আছে। সুত্র: রাইজিংবিডি