দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পুঁজিবাজারে আসার পর থেকেই একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছে কোম্পানিটি। তালিকাভুক্তির সময় ওয়ালটনের বাজার মূলধন ছিল ৭ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকায়। এদিক দিয়ে তালিকাভুক্ত স্থানীয় সব কোম্পানিকে ছাড়িয়ে গেছে ওয়ালটন। এত অল্প সময়ে বিশেষ করে কভিড-১৯-এর মতো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে আর কোনো কোম্পানির বাজার মূলধন এত বেশি হারে বাড়েনি। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে আলোড়িত কোম্পানি ছিল ওয়ালটন।

পুঁজিবাজারে আসার পর একে একে রেনাটা, ইউনাইটেড পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বিএটিবিসির মতো কোম্পানিকে ছাড়িয়ে যায় ওয়ালটন হাই-টেকের বাজার মূলধন। এক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের পরই রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। পুঁজিবাজারের মোট বাজার মূলধনের ৮.৬৭ শতাংশই এখন ওয়ালটনের দখলে। কোম্পানিটির মূলধন যে গতিতে বাড়ছে তাতে প্রথম স্থানে থাকা গ্রামীণফোনকে ছাড়িয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বর্তমানে ওয়ালটনের মোট শেয়ারের ৯৯.০৩ শতাংশই রয়েছে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.২৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ০.৭০ শতাংশ শেয়ার। গতকালের শেয়ারদর অনুযায়ী ওয়ালটনের উদ্যোক্তাদের কাছে থাকা শেয়ারের মূল্য ৩৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। ফলে কোম্পানি হিসেবে ওয়ালটনের পাশাপাশি এর উদ্যোক্তারাও পুঁজিবাজারের অন্যতম শীর্ষ সম্পদশালীতে পরিণত হয়েছেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছেও এখন ওয়ালটনের শেয়ারের চাহিদা তুঙ্গে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আইপিওর বিডিং প্রক্রিয়ায় যোগ্য বিনিয়োগকারীরা (ইআই) ওয়ালটনের প্রতিটি শেয়ারের দাম নির্ধারণ করেছিলেন ৩১৫ টাকা। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ২০ শতাংশ কমে ২৫২ টাকায় পেয়েছেন কোম্পানিটির শেয়ার।

লেনদেন শুরুর দিনেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩৭৮ টাকায় দাঁড়ায়। সে হিসাবে লেনদেনের প্রথম দিন শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ১১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর পর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল কোম্পানিটির শেয়ারদরে।

এরপর মাত্র সাতদিনেই হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায় কোম্পানিটির শেয়ারদর। মাঝে কিছুদিন সংশোধন হলেও ডিসেম্বরের শুরু থেকেই আবারো ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে ওয়ালটনের শেয়ারদর। গতকাল সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার ১ হাজার ১১৩.৮০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এ যাত্রায় আইপিও প্রসপেক্টাসে দেয়া শেয়ারের সর্বোচ্চ ভ্যালুয়েশনও ছাড়িয়েছে ওয়ালটন।

জানতে চাইলে ওয়ালটন হাই-টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বলেন, ওয়ালটনের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সেটি দেশের খুব কম কোম্পানিরই আছে। আমাদের কারখানা ৭০০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। ব্যবসার ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। যদিও কভিডের কারণে সর্বশেষ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় ব্যবসা কিছুটা কমেছে।

তবে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভালোই হয়েছে ব্যবসা। অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও পদচারণা বাড়াতে চায় ওয়ালটন। আমাদের লক্ষ্য, ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নেয়া। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। বরাবরের মতোই বিনিয়োগকারীরাও আমাদের এ অগ্রযাত্রার অংশীদার হিসেবে থাকবেন।

ওয়ালটনের যাত্রা বেশি দিনের নয়। ২০০৮ সালে কোম্পানিটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। এরই মধ্যে তারা দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। কোম্পানিটির উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, টিভি, ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স। তাছাড়া বিদেশে রেফ্রিজারেটর ও কম্প্রেসরও রফতানি করছে ওয়ালটন। কভিডের সময়ে কোম্পানিটি নিজেদের কারখানায় ভেন্টিলেটর উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়।

২০১৯-২০ হিসাব বছরে ওয়ালটনের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১০৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে ১ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭২৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকায়।

যেখানে আগের হিসাব বছরে মুনাফা হয়েছিল ১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটন হাই-টেকের বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭২ কোটি টাকায়। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।