দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের লেনদেন তলানিতে নেমে গেছে। লেনদেন পদ্ধতি সহজ না হওয়ার পাশাপাশি চাহিদা না থাকার কারণে এই মার্কেটে শেয়ারের বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা মেলা কষ্টসাধ্য। যে কারণে গত এক বছরে এই মার্কেটের লেনদেন উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০ সালে ওটিসি মার্কেটে শেয়ার লেনদেন আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে ৯৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এক বছরে ওটিসি মার্কেটে মোট ১০ লাখ ১৮ হাজার ২৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ারের বাজারমূল্য এক কোটি ৯ লাখ ২১ হাজার ৪৯ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে আশঙ্কাজনক হারে কম। আগের বছর (২০১৯) ওটিসি মার্কেটে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৪টি। আর এসব শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২২ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৮৯২ টাকা।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সংশ্লিষ্টরা বলেন, চলতি বছরে ওটিসি মার্কেটের অগ্রগতি হবে। আশা করা যাচ্ছে, এ বছর ওটিসি মার্কেটের লেনদেন চিত্রে পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি এই মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফিরে আসবে অনেকগুলো কোম্পানি। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারধারীরা মূল মার্কেটে শেয়ার লেনদেন করার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি এই মার্কেটে যে কোম্পানিগুলো থাকবে সেসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন পদ্ধতি আরও সহজ করা হবে।

জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা ওটিসি মার্কেটের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি এই মার্কেটে যাদের অর্থ আটকে রয়েছে, তারা উপকৃত হবেন। মার্কেটে অনেকগুলো কোম্পানি রয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর ধরন ভিন্ন ভিন্ন। এর মধ্যে কিছু কোম্পানির অবস্থা খুবই নাজুক। আবার কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা আর্থিকভাবে ভালো করছে।

এ কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তাই এসব কোম্পানি যাতে দ্রুত মূল মার্কেটে লেনদেন করতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা করব। এতে বিনিয়োগকারীরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। পাশাপাশি ওটিসি মার্কেটে কিছু কোম্পানি রয়েছে, যাদের অস্তিত্ব নেই। এসব কোম্পানি নিয়েও কাজ করছি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই এসব করা হচ্ছে।

ওটিসি মার্কেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে লেনদেন পদ্ধতি খুব কঠিন। শেয়ারের বিক্রেতা থাকলেও এখানে ক্রেতা পাওয়া মুশকিল, যে কারণে ২০১৮ সালের শুরুতে এ মার্কেটের পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তারপর এর অগ্রগতি থেমে যায়। এখন পর্যন্ত বিষয়টি উদ্যোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ওটিসি মার্কেট থেকে অস্তিত্বহীন কোম্পানি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ মার্কেটের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই এবং যেসব প্রতিষ্ঠান আইন মেনে চলে না, সেসব প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে ওটিসি মার্কেট পুনর্গঠন করা হয়।

পরে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা পড়ে। সেখান থেকে বলা হয়, খুব শিগগির এ প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করবে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ওটিসি মার্কেট পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু এরপর বিষয়টিতে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

এদিকে মার্কেটের কোনো অগ্রগতি না হওয়া যেসব কোম্পানি বাদ পড়বে, সেসব কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে। কারণ বাদ পড়ার তালিকায় থাকা এসব কোম্পানিতে তাদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আটকে রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওটিসিতে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব একবারেই নেই। কোম্পানিগুলো হলো: বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি মিটার কোম্পানি (বেমকো), চিক টেক্সটাইল, রাসপিট ডাটা, রাসপিট ইনকরপোরেশন, এম হোসেন গার্মেন্ট, ফার্মাকো, আমান সি ফুড, জার্মান বাংলা ফুড, মেটালিক্স, রাঙ্গামাটি ফুড ও সালেহ কার্পেট। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের প্রায় চার কোটি ৮৭ লাখ শেয়ার রয়েছে, আনুমানিক যার বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি।