দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মহামারী করোনা মোকাবেলায় প্রণোদনার দ্বিতীয় প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী মাসে এই প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। নতুন প্রণোদনা প্যাকেজে শিল্পখাতের উৎপাদন বাড়াতে বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। এতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের (এসএমই) শিল্পখাত উন্নয়নে। এই খাতের জন্য প্রথম দফায় বরাদ্দকৃত ২০ হাজার কোটি টাকা দ্রুত ছাড়করণ করা হবে।

প্যাকেজের আওতায় নতুন বরাদ্দ পাবে এসএমই খাত। এছাড়া আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। নতুন ওই বাজেটের আকার ১০-১২ শতাংশ বাড়ানোর আভাস দেয়া হয়েছে। এতে বাজেটের সম্ভাব্য আকার দাঁড়াবে ৬ লাখ ১৫ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো।

জানা গেছে, বিদায়ী বছরের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী সিঙ্গাপুর থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি প্রাথমিক রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। সে রূপরেখা অনুযায়ী জুনে চূড়ান্ত বাজেট তৈরি করা হয়।

ওই বৈঠকে অর্থনীতিতে করোনা মহামারীর প্রভাব সংক্রান্ত ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা অর্থমন্ত্রীকে দেখানো হয়। এতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ আগামী মাসে ঘোষণার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়। তারপরই আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকার পরও প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাজেটের আকার ১০-১২ শতাংশ বাড়ানো হবে। এক্ষেত্রে নিজম্ব অর্থায়নের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ এবং অনুদান প্রাপ্তিতে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ও এডিবিসহ বড় বড় দাতা সংস্থাগুলোর কাছে বাজেট সহায়তা চাওয়া হবে।

ইতোমধ্যে করোনা মোকাবেলায় টিকা আমদানিসহ অবকাঠামো উন্নয়নে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ আসা শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দশ মেগা প্রকল্পসহ অবকাঠামো উন্নয়নে আগামী বাজেটেও সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হবে। দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এবার দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দাতা সংস্থাগুলো চাইলে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

জানা গেছে, করোনার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় চাপের মুখে পড়েছে। এ জন্য সরকারকে ঋণ, অনুদান এবং অভ্যন্তরীণ উৎস বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার সবটুকু ঋণ নেয়া হয়েছে সঞ্চয়পত্র থেকে। এ কারণে এ খাত থেকে আরও টাকা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। নতুন বাজেটে এক হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে রাজস্ব টার্গেট তিন লাখ ৮৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।

এটি জিডিপির ১০.৮ শতাংশ। বৈঠকে দুই লাখ ছয় হাজার ৬১ কোটি টাকা ঘাটতির প্রস্তাব করেছে। এটি জিডিপির ৫.৮ শতাংশ। আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৭.৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫.৩ শতাংশ। জিডিপির আকার ধরা হচ্ছে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে মোট বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপির ৩২ শতাংশ।

করোনার ধাক্কা সামাল দিতে প্রথম দফায় ২১ প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এই প্যাকেজ শতভাগ বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা গেলে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।