তৌফিক ইসলাম ও মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: স্থিতিশীলতার পথে এগুচ্ছে পুঁজিবাজার। আস্তে আস্তে ঘুরে দাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে সব সূচক। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সূচকটি বছরের প্রথম কার্যদিবস ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে। এদিন ডিএসইএক্স বেড়েছে ২১৭ পয়েন্ট। যা সূচকটি চালু হওয়ার ৮ বছরের মধ্যে একদিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান। এদিন ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেনেও বড় উত্থান হয়েছে। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজার টানা দরবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার মাধ্যমে স্বাভাবিক বাজার গড়ে উঠবে। লেনদেনের শুরু থেকেই বাই প্রেসারে টানা বাড়তে থাকে সূচক। অবশেষে লেনদেনও ছাড়ালো প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এই ফিগার ৪০০০ কোটি টাকায় যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে, বর্তমান সময়ে পুঁজিবাজারের যে গভীরতা বা মুলধন রয়েছে তাতে ৩০০০ কোটি টাকা লেনদেন হলে সেটাই স্বাভাবিক হতো। গত ফেব্রূযারীতে যেকোনো মূল্যে পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মুলত বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে গত জুলাই থেকে দেশের শেয়ারবাজারে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

সেই সঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ পদে। এরপর থেকেই বাজার ধীরে ধীরে উজ্জীবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে পরপর দুবার বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজারকে পেছনে ফেলে সেরা তালিকায় স্থানও পেয়েছে বাংলাদশের শেয়ারবাজার। এখন শেয়ারবাজারের ভিত শক্ত করতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসইসি।

এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। অতি সম্প্রতি শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে বিএসইসি। মুলত নিয়ন্ত্রক সংস্থার একের পর এক উদ্যোগে পুঁজিবাজার শক্তিশালী হচ্ছে। আর পেছনে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তার ক্যারিশম্যাটিকে গতি ফিরে পেয়েছে পুঁজিবাজারের।

পুঁজিবাজার ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম কাজ করে যাচ্ছে। ২০২০ সালে ফ্লোর প্রাইজ নির্ধারণ করার কারণে বাজারে পতন রোধ হয়েছে। তবে এখনো যেসব কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে সেগুলোর ফ্লোর প্রাইজ ১০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। তাতে লেনদেনে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

শেলটেক ব্রেকারেজ হাউজের মতিঝিল শাখার প্রধান নূরনবী বাদল দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উপযোগী সময়। সরকার সহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার পুঁজিবাজার ইস্যুতে আন্তরিক ফলে লেনদেন ৪ হাজার কোটি টাকা ও সূচক ৮ হাজার এখন সময়ের ব্যাপার। তাছাড়া বিএসইসি চেয়ারম্যান পুঁজিবাজার ইস্যুতে যে ভাবে দ্রুত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আশা করি এর ফল খুব দ্রুত বিনিয়োগকারীরা পাবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয় বিডিবিএল ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের সিনিয়র প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা মো: সাহাবুদ্দিন রনি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থার ফলে বছরের প্রথম দিন সূচকের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে। এ উত্থান নিয়ন্ত্রক সংস্থার আস্থার বহি:প্রকাশ। মুলত ব্যাংক খাত শেয়ারের দরবৃদ্ধি ছাড়া ২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত বহন করে। পাশাপাশি মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে দীর্ঘদিন পর বিনিয়োগকারীদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। এ কারনে লেনদেনে রেকর্ড সুষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স আ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজারের যে ফান্ডামেন্টাল তাতে দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন স্বাভাবিক বিষয়। অনেকে বলেন পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে। কিন্তু আমি বলি পুঁজিবাজার কখনও স্থিতিশীল হয় না, বরং গতিশীল পুঁজিবাজার প্রয়োজন।’ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা অর্জন বাড়াতে হবে। আস্থা বাড়লে তখন পুঁজিবাজারের জন্য রেকর্ড হিসাব করলে চলবে না। পুঁজিবাজারে সব সময় কিছু সুবিধাভোগী থাকবে। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন আছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’