দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করলে তা পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে আলাদা ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। আর কোনো কারণে লভ্যাংশ বণ্টন করা না গেলে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রস্তাবিত ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ বা অন্য কোনো তহবিল গঠন হলে ওই লভ্যাংশ এ তহবিলে স্থানান্তর করতে হবে। লভ্যাংশ সংক্রান্ত এমন একটি নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে বিএসইসি। কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএসইসির এ নির্দেশনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরির বিষয়ে নির্দেশ থাকবে। লভ্যাংশ বিতরণ নীতিমালা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, লভ্যাংশ বিতরণ নিয়ে বিভিন্ন জটিলতার অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিগুলো দাবি করছে, বিও হিসাবে থাকা গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ভুল থাকা বা হালনাগাদ না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু লভ্যাংশ বিতরণ করা যাচ্ছে না।

এই অবণ্টিত লভ্যাংশ যাতে কোম্পানির হিসাবে না রেখে দাবিহীন লভ্যাংশ নিয়ে যে তহবিল গঠন করা হচ্ছে সেখানে নিয়ে আসার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে এসইসি প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির কাজ করছে।

কমিশন যে নীতিমালা করতে যাচ্ছে তাতে বলা হচ্ছে, কোনো কারণে কোনো কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারদের অনুকূলে লভ্যাংশ বিতরণ করতে ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ উল্লেখসহ অবণ্টিত লভ্যাংশের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের নাম বা বিও অ্যাকাউন্টের ক্রম অনুযায়ী সমুদয় তালিকা বার্ষিক এবং প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে হবে।

অবণ্টিত লভ্যাংশের অর্থ ব্যাংকে জমা থাকার কারণে সেখান থেকে কোনো সুদ প্রাপ্ত হলে, সে সুদের অর্থ ‘অবণ্টিত লভ্যাংশ অ্যাকাউন্ট’ নামে একটি ব্যাংক ও বিও অ্যাকাউন্ট খুলে সাময়িকভাবে স্থানান্তর করতে হবে।

কোনো শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডার অবণ্টিত মুনাফার দাবি জানালে দ্রুত তা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা লভ্যাংশ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির আদেশ বা নির্দেশে কোনো তহবিলে হস্তান্তর করে থাকলে সে ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারদের দাবি করলে তা ফেরত দেওয়া হবে।

কমিশন এ বিষয়ে যে নির্দেশনাটি জারি করতে যাচ্ছে, তাতে বলা হচ্ছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কোনো নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করলে ওই হারে লভ্যাংশ প্রদানের জন্য যে অর্থ লাগবে, সংশ্লিষ্ট পর্ষদ সভায় সুপারিশ করার ১০ দিনের মধ্যে ওই পরিমাণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে।

এরপর বার্ষিক সাধারণ সভায় বা (অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের ক্ষেত্রে) পর্ষদে অনুমোদনের পর নগদ লভ্যাংশ বিইএফটিএন বা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত কোনো ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে। স্টক ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রে শেয়ার জমা দিতে হবে বিও হিসাবে।

তবে কোনো শেয়ারহোল্ডারের বিও অ্যাকাউন্ট তথ্যে ব্যাংক হিসাব না থাকলে বা কেউ মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ পেলে তা সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যাংক হিসাবে একই উপায়ে নগদ লভ্যাংশ বা শেয়ার স্থানান্তর করতে হবে। কোনো কারণে কোনো শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক হিসাবে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার করার সুযোগ না থাকলে সেক্ষেত্রে কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডারদের নাম ও ঠিকানা উল্লেখপূর্বক ‘ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট’ ইস্যু করা যাবে।

ডিভিডেন্ড স্থানান্তরে যাতে কোনো প্রকাশ তথ্যগত সমস্যা না হয়, তার জন্য সব ব্রোকারেজ হাউজ এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি প্রতিষ্ঠান সিডিবিএলকে সব বিও অ্যাকাউন্টধারীর তথ্য ফরমে উল্লেখিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানা প্রতি বছর অন্তত একবার হালনাগাদ করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারী বা তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিদেশি উদ্যোক্তা বা পরিচালকের লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে কাস্টোডিয়ান ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে পারবে। লভ্যাংশ পাঠানো সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে।

কোনো কারণে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপক শেয়ারহোল্ডারদের স্টক ডিভিডেন্ড বা রাইট শেয়ার হস্তান্তর করতে না পারলে একটি সাময়িক সাসপেন্ড অ্যাকাউন্টে ওই শেয়ার স্থানান্তর করবে।

এ বিও হিসাবটির শেয়ার যাতে অনুমোদিতভাবে স্থানান্তর করা না যায়, তার জন্য ব্লক মডিউল দ্বারা শেয়ার ব্লক রাখতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারের ঠিকানায় শেয়ার গ্রহণের জন্য অন্তত তিনবার নোটিস পাঠাতে হবে। অবণ্টিত স্টক ডিভিডেন্ডের শেয়ার বণ্টন না হওয়া পর্যন্ত তার বিপরীতে ভোটিং ক্ষমতা স্থগিত থাকবে বলেও জানা গেছে।