দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা ১৩ কার্যদিবস দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ। এমনটি অন্য কোনো শেয়ারের ক্ষেত্রে কখনও হয়নি। ১০ টাকার শেয়ারের দর বাড়তে বাড়তে ঠেকেছে ৬৩ টাকা ২০ পয়সায়। আইপিওতে পাঁচ হাজার টাকার শেয়ারের দাম এখন এখন ৩১ হাজার ৬০০ টাকা। বহুজাতিক কোম্পানির রবির শেয়ারের দাম টানা ১৩ কার্যদিবসে বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব। এর আগে পুঁজিবাজারে এই ঘটনা কখনও ঘটেনি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর লেনদেন শুরু হলে প্রথম দুই কার্যদিবসে আগের দিনের তুলনায় ৫০ শতাংশ দাম বাড়তে পারে কোনো শেয়ারের। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারটি গত ২৪ ডিসেম্বর লেনদেন শুরু করে। সেদিন দাম হয় ১৫ টাকা। দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ২৭ ডিসেম্বরের লেনদেনে দাম আরও ৫০ শতাংশ বেড়ে হয় ২২ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দাম বাড়তে পারে। আর নয় কার্যদিবসে এই সর্বোচ্চ পরিমাণেই বেড়েছে দাম।

এই ১২ কার্যদিবসে দেখা গেছে, প্রতিদিন লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটে রবির শেয়ার বিক্রেতা উধাও হয়ে যায়। বিপরীতে লক্ষাধিক শেয়ার ক্রয়ের আগ্রহ প্রদর্শন করে ক্রয় অর্ডার দিয়ে রাখেন বিনিয়োগকারীরা। বিক্রেতা না থাকায় হলট্রেড কোম্পানি হিসাবে লেনদেন শেষ হয় কোম্পানিটির।

আরেকটি অভিনব ঘটনা ঘটেছে। নানা সময় দেখা গেছে, কোনো কোম্পানির দাম টানা কয়েক কার্যদিবস বাড়লে দিনভর কখনও উঠানামা থাকে দরে। কিন্তু রবির ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়নি। লেনদেনের একেবারে শুরুতেই দাম উঠে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কখনও এ থেকে কমেছে এমনটা ঘটেনি।

তৃতীয় কার্যদিবস থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির শর্তে পড়ে রবি। তবে ভগ্নাংশের হিসাবে ১০ শতাংশের বদলে নয় শতাংশের কিছু বেশি বেড়েছে। ২৮ ডিসেম্বর প্রায় ১০ শতাংশ দাম বেড়ে দাম হয় ২৪.৭০ টাকা। ২৯ ডিসেম্বর দাম বেড়ে হয় ২৭.১০ টাকা। ৩০ ডিসেম্বরও একই হারে দাম বেড়ে হয়েছে ২৯.৮ টাকা।

৩১ ডিসেম্বর ব্যাংক হলিডে ও তারপর শুক্র-শনিবার থাকায় নতুন বছর ২০২১ সালের প্রথম লেনদেন হয় ৩ জানুয়ারি। এদিন রবির শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৯০ পয়সা বা ৯ শতাংশের উপরে দাম বেড়ে হয় ৩২.৭০ টাকা। ৪ জানুয়ারি শেয়ার প্রতি ৩.২ টাকা দাম বেড়ে হয় ৩৫.৯০ টাকা।

৫ জানুয়ারি ৩.৫ টাকা দাম বেড়ে হয় ৩৯.৪০ টাকা। ৬ জানুয়ারি একইভাবে ৯ শতাংশের বেশি দাম বেড়ে হয় ৪৩.৩০ টাকা। ৭ জানুয়ারি দাম হয় ৪৭.৬০ টাকা। শুক্র ও শনিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকার পর ১০ জানুয়ারি লেনদেনের শুরুতেই দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় বিক্রি হয় শেয়ার। বিক্রি হয় ৫২.৩০ টাকায়। মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতেই আবার সর্বোচ্চ বেড়ে দাম হয় ৬৩ টাকা ২০ পয়সা।

এভাবে দুই সপ্তাহ ধরে রাখায় আইপিওতে পাঁচ হাজার টাকার শেয়ারের বাজার মূল্য এখন ৩১ হাজার ৬০০ টাকা। সোমবার লেনদেন শেষে এমন তথ্যই হিসাবই মিলেছে যে, রবির আইপিও পাওয়া বিনিয়োগকারীদের বহুজন এখনও শেয়ার বিক্রি না করে ধরে রেখেছেন।

ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি আইপিওতে লক্ষাধিক রবির শেয়ার পেয়েছে তারা ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এটি বহুজাতিক কোম্পানি। এর চাহিদা বেশি থাকবে। ফলে দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে রবির শেয়ার আছে, বিক্রি না করার অধিকার আমার আছে। তবে রবির শেয়ারের অনেক চাহিদা আছে তা প্রদর্শন করে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে কিনা সেটা দেখা উচিত।’ আইপিওতে শেয়ার পাননি এমন একজন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রথম কয়েকদিন আগ্রহী ছিলাম রবির শেয়ার কিনতে। এখন দাম যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে যে কোনো সময় দরপতন হতে পারে। তাই এখন কেনার আগ্রহ নেই।’

আর আইপিও পেয়ে ৩৫ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি করে দিয়েছেন মশিউর রহমান। তবে এখন বলছেন আরো কিছু দিন ধরে রাখলে লাভ নিশ্চিত আরও বেশি পেতেন। কিন্ত সস্তুষ্টি লোকসান হয়নি। ‘শেয়ার বাজার এমনই’- মন্তব্য তার।

রবি তালিকাভুক্তির পর পুঁজিবাজারে মোবাইল ফোন অপারেটরের সংখ্যা দাঁড়াল দুইটি। এর আগে ২০০৯ সালে গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। বর্তমানে পুঁজিবাজারে টেলিযোগাযোগ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা তিনটি। গ্রামীণফোন, রবি, অন্যটি সরকারি মালিকানাধীন সাবমেরিন কেবল কোম্পানি।