দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পূর্ব অনুমতি ছাড়াই তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন তদন্তের জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়া নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফলে গতকালকের (১২ জানুয়ারি) প্রেরিত চিঠির কার্যকারিতা থাকল না।

বুধবার স্থগিতাদেশের চিঠি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে।বিষয়টি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে নিশ্চিত করেছেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবি দর উঠা-নামা,শেয়ার প্রতি আয়(ইপিএস) অস্বাভাবিক পরিবর্তন খতিয়ে দেখার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জকে একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছিলো। সেই গাইডলাইন আজকে স্থগিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, সব কোম্পানিকে একইভাবে দেখা হয় না। এই কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছিলো। যাতে করে একই গাইডলাইন মেনে সব কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে। কিন্তু পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ভালোভাবে নেই বলে মনে হয়েছে। তাই এটিকে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় কমিশন। সেই জন্য তদন্তের গাইডলাইনটি স্থগিত করা হয়েছে।

সূত্র মতে, এর আগে গত ১১ জানুয়ারি বিএসইসির উপ পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) এবং দুই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাদেরকে (সিআরও) দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা পরিপালন করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ৪৫ কার্যদিবস। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার বিএসইসি ৪টি কারনে তালিকাভুক্ত কোম্পানির দর উত্থান-পতনের বিষয়ে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল বিএসইসি। এরমধ্যে বিগত ৩০ কার্যদিবস বা কম সময়ের মধ্যে যদি কোন কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ে বা কমে, তার কারন খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল। যার জন্য বিএসইসির অনুমোদন লাগবে না এবং যখনই কোন কোম্পানির ক্ষেত্রে এমনটি হবে, তখনই তদন্ত করতে পারবে বলে জানানো হয়েছিল।

এছাড়া বিএসইসির চিঠিতে কোন কোম্পানির গড় লেনদেনের পরিমাণ আগের ৬ মাসের গড় লেনদেনের চেয়ে ৫ গুণের বেশি বাড়লে, কোন কোম্পানির বার্ষিক বা প্রান্তিক শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি উত্থান-পতন হলে এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশের আগের ১০ কার্যদিবসে কোন কোম্পানির দাম ও লেনদেন ৩০ শতাংশের কম-বেশি হলে, সেসব কোম্পানির বিষয়েও তদন্ত করতে বলা হয়েছিল।

বিএসইসির ওই তদন্তের নির্দেশের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়। এর প্রেক্ষিতে আজ শেয়ারবাজারে বড় ধস নেমেছে। বিনিয়োগকারীদের এই আতঙ্কের কারনে বিএসইসি গতকালকের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

তবে বিএসইসির ওই উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। তাদের মতে, ওই তদন্তের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের অনিয়ম বের করে আনা হত। যা সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করত।