তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় পতন হয়। এক দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক কমে ৬০০ পয়েন্ট। ওইদিন বিক্রয় চাপ থাকায় ডিএসইতে মোট তিন হাজার ২৩২ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়। এটা ছিল বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লেনদেন। পরের কার্যদিবস অর্থাৎ (২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর) ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় দুই হাজার ৭১০ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এটা ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এরপর বাজারে দীর্ঘমেয়াদি পতন থাকার কারণে সেভাবে লেনদেন বৃদ্ধি পায়নি, যার ফলে ১০ বছর পর গতকাল ডিএসইতে প্রায় ২৪ শত কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়।

২০১০ সালের পর বাজার সেভাবে ঘুরে দাঁড়ায়নি। কয়েক দফা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও তা দীর্ঘমেয়াদি হয়নি। পরে মহামারি কভিড-১৯-এর প্রকোপ আর আস্থা সংকটের কারণে আরও নিস্তেজ হয়ে পড়ে দেশের পুঁজিবাজার। করোনার প্রথম দিকে বাজার নিন্মমুখী থাকলেও পরবর্তীকালে তা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর পুঁজিবাজারে লেনদেন সচল থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর মধ্যেও প্রায় বিনিয়োগকারী শূন্য অবস্থায় পুঁজিবাজারে লেনদেন চলতে থাকে। পরে ২৬ মার্চ থেকে করোনা মহামারির কথা চিন্তা করে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে পুঁজিবাজারেও লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। দীর্ঘ ৬৬ দিন পর ৩১ মে থেকে আবারও লেনদেন শুরু হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে গতি পেতে থাকে পুঁজিবাজার। পরবর্তী সময়ে দেখা যায় ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এর পর থেকেই লেনদেন ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজার এখন ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। পাশাপাশি বাজারে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যোগ হচ্ছে। ফলে লেনদেন একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।আজ যদিও সূচকের বড় ধরনের দরপতন হয়েছে।

এদিকে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বড় উত্থান হলেও পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বড় ধরনের দরপতনে দিয়ে শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। আজ ছয় কোম্পানি লেনদেন ঘিরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের মোট ২৮১ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড।

কোম্পানিটির ২ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার ১৬৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৯০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। লংকাবাংলা ফিন্যান্স তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ১৩৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ১৬৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। সামিট পাওয়ার তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির আর্থিক মুল্য ১৫৭ কোটি টাকা ৮০ লাখ টাকা।

বেক্সিমকো ফার্মা তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে যার আর্থিক মুল্য ৭৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সিটি ব্যাংক তালিকায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে, যার আর্থিক মুল্য ৭১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পাকা। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। একইসাথে কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ প্রায় ২৪ শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

জানা গেছে, আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৮.৮৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৫০.৪৩ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২৪.১৮ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ২৭.৯৫ পয়েন্ট এবং সিডিএসইটি সূচক ২২.৪৩ পয়েন্ট কমে দাড়িয়েছে যথাক্রমে ১২৯৯.৩১ পয়েন্টে, ২২০৮.৮২ পয়েন্টে এবং ১২৬৯.৫৮ পয়েন্টে। ডিএসইতে ২ হাজার ৩৮৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ৩১৪ কোটি ২ লাখ টাকা বেশি।

আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭২টির বা ২০.০৫ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ২৩১টির বা ৬৪.৩৪ শতাংশের এবং ৫৬টির বা ১৫.৫৯ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৭.৫২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৭.৫২ পয়েন্টে। সিএসইতে ২৭৯টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮১টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬৮টির আর ৩০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৫১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।