এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিসে সূচকের বড় ধরনের দরপতনে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল সূচকের দরপতন বাজাওে বড় ধরনের লেনদেন হয়েছে। তবে সূচকের দরপতন হলেও বাজার নিয়ে আতঙ্কেও কোন কারন নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারন একটানা সূচকের উর্দ্বমুখীর পর কিছুটা কারেকশন হলে আতঙ্কেও কিছু নেই। ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ার কিনে বসে থাকলে লাভ সুনিশ্চিত।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, পুঁজিবাজারের কাজই সূচকের উঠানামা করা। কারন সূচকের একটানা দরবৃদ্ধি যেমন ভাল লক্ষণ নয়। তেমনি সূচকের টানা দরপতন স্থিতিশীল বাজারের লক্ষণ নয়। আমার মনে হয় মাঝে মধ্যে সূচকের কারেকশন হলে স্থিতিশীল বাজারের লক্ষণ মনে হবে। বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাজার নিয়ে আর কঠিন তদারকি করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। কারন কারসাজি চক্র যেন বাজারকে অস্থিতিশীল করতে তা পাওে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শনিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেছেন, পুঁজিবাজারে কারসাজির দিন শেষ। কারসাজি করে এখন আর কেউ পার পাবে না। কেউ খেলতে চাইলে আমরা তাকে তখনই ধরে ফেলব। পুঁজিবাজারে কোনো লোক যদি দুষ্টামি করতে আসে, তার কাছে কত টাকা থাকতে পারে? শত কোটি, হাজার কোটি? আমরা তার ১০ গুণ ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছি আইসিবিকে। যাতে কেউ খেলতে এসে কোনো সুবিধা না করতে পারে। কেউ খেলতে চাইলে আমরা তাকে ধরে ফেলব তখনই।

এদিকে বড় পতনে শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এদিন উভয় পুঁজিবাজারের সব সূচক কমেছে। একইসাথে কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ প্রায় ২৪ শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

টানা দাম বাড়ার পর রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে এসে দাম কমল সদ্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রবির শেয়ারের। এর আগে বুধবার রবির শেয়ারের স্বাভাবিক লেনদেন হলেও দামের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেদিন রবির শেয়ার দর ৬৩.৩ টাকা থেকে ৬৩.৮ টাকায় ৬ কোটির বেশি শেয়ার লেনদেন হয় ৪০০ কোটি টাকায়। তবে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে রবি।
বাজার বিনিয়োগকারীরা বলছেন, রবির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ শুরু থেকেই।

কিন্তু কোম্পানিটির শেয়ারের দাম যেভাব বাড়ছিল তা প্রত্যাশিত ছিল না। মূলত রবিসহ বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বিএসইসি তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তা থেকে সরে আসে সংস্থাটি। তারপরও আতঙ্ক থেকে যায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির ফলে বিএসইসি যে কোনো সময় রবির শেয়ারের দাম বাড়ার কারণ তদন্ত করতে পারে, সে আতঙ্ক থেকে মূলত বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রয় করছে বলে মন্তব্য বিনিয়োগকারীদের।

আজ রোববার লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রবির শেয়ারের দাম ৭০.১ টাকা থেকে ৬৩.১ টাকায় ওঠানামা করে। দিনশেষে দাম দাঁড়িয়েছে ৬৪.৫ টাকায়। এদিন কোম্পানির শেয়ার দর ৭.৯৯ শতাংশ কমেছে। লেনদেন হয়েছে ২৮১ কোটি টাকার। বরাবরের মতো রোববারও লেনদেনের শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। নিজে টিকা বাজারজাত করার উদ্যোগসহ সরকারের সাথে টিকা সরবরাহ চুক্তির কারণে কোম্পানিটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বেশি। রোববার বেক্সিমকো লিমিটেডের ২ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯০ কোটি টাকায়। তারপরের অবস্থানে ছিল লংকাবাংলা ফিন্যান্স, যার ৩ কোটি ৭২ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬৭ কোটি টাকায়।

পুঁজিবাজারে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি রবি তালিকাভুক্ত হয়েছে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর। লেনদেনর পর থেকে ক্রমাগত বেড়েছে এটির শেয়ারের দর। কোনো ধরনের উত্থান-পতন ছাড়াই ১০ টাকা শেয়ার ১৪ কার্যদিবসে উঠে আসে ৬৩ টাকায়। রবি তালিকাভুক্তির পর পুঁজিবাজারে মোবাইল ফোন অপারেটরের সংখ্যা দাঁড়াল দুইটি। এর আগে ২০০৯ সালে গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। বর্তমানে পুঁজিবাজারে টেলিযোগাযোগ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা তিনটি।

গ্রামীণফোন, রবি এবং অন্যটি সরকারি মালিকানাধীন সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। এদিকে জানা গেছে, আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৮.৮৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৫০.৪৩ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২৪.১৮ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ২৭.৯৫ পয়েন্ট এবং সিডিএসইটি সূচক ২২.৪৩ পয়েন্ট কমে দাড়িয়েছে যথাক্রমে ১২৯৯.৩১ পয়েন্টে, ২২০৮.৮২ পয়েন্টে এবং ১২৬৯.৫৮ পয়েন্টে। আজ ডিএসইতে ২ হাজার ৩৮৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ৩১৪ কোটি ২ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার।

ডিএসইতে আজ ৩৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭২টির বা ২০.০৫ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ২৩১টির বা ৬৪.৩৪ শতাংশের এবং ৫৬টির বা ১৫.৫৯ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৭.৫২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৭.৫২ পয়েন্টে। সিএসইতে ২৭৯টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮১টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬৮টির আর ৩০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৫১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।