দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্রোকার হাউজের ব্যবসা প্রসার ও বিনিয়োগকারীদের সেবা সহজ করতে দেশে এবং বিদেশে ডিজিটাল বুথ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে।

তবে নির্দেশনা জারির পর, সব শর্ত পালন করে কেবলমাত্র আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে ডিজিটাল বুথ স্থাপনের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে। এছাড়া আরও ১২টি ব্রোকারেজ হাউজ আবেদন জমা দিলেও, তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছে বিএসইসি।

সূত্র জানায়, ডিজিটাল বুথ স্থাপনের জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন জানিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত মোট ১৩টি ব্রোকারেজ হাউজ। এর মধ্যে ১১টি ব্রোকারেজ হাউজ সিএসইর মাধ্যমে এবং প্রথকভাবে ডিএসইর ২টি ব্রোকারজে হাউজ আবেদন জানিয়েছে। এই ১৩টি ব্রোকারেজ হাউজ বিভিন্ন জেলায় মোট ১৬৩টি বুথ স্থাপনের জন্য আবেদন জানিয়েছে। আর বিদেশের ১৩টি দেশে বুথ স্থাপনের জন্য আবেদন করেছে হাউজগুলো। তবে এর মধ্যে মাত্র একটি ব্রোকারেজ হাউজ সব শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিএসইসিতে আবেদন জানিয়েছে।

ডিজিটাল বুথের জন্য অসম্পূর্ণ আবেদন করা সিএসইর ব্রোকারেজ হাউজগুলো হলো- রেমন্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, মিরপুর সিকিউরিটিজ, রয়েল ক্যাপিটাল, ইস্টার্ন শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, অ্যাসোসিয়েটেড ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ, ডি এন সিকিউরিটিজ, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ, প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজ, ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ ও যমুনা ব্যাংক সিকিউরিটিজ।

এর মধ্যে রেমন্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ দেশের সব জেলায় বুথ স্থাপন করবে বলে আবেদন জানিয়েছে। এছাড়া অসম্পূর্ণ আবেদন করা ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউজগুলো হলো- লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ ও মাল্টি সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভিসেস।

তবে ব্রোকারেজ হাউজগুলো বলছে, নির্দেশনা জারির আগে দেশের অভ্যন্তরে যেসব জায়গায় (সিটি, জেলা ও ইউনিয়ন) ডিজিটাল বুথ স্থাপনের জন্য বিএসইসিতে আবেদন দেওয়া হয়েছে, তা চূড়ান্ত নয়। ডিজিটাল বুথ স্থাপনের বিষয়ে আগ্রহী হিসেবে ওই আবেদন জানানো হয়েছে। তবে সব শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ডিজিটাল বুথ স্থাপনের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিএসইসিতে আবেদন করা হবে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ নভেম্বর বিএসইসির ৭৪৭তম নিয়মিত সভায় ডিজিটাল বুথ সংক্রান্ত নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৪ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। ওই নির্দেশনা পরিপালন সাপেক্ষে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কাছে রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার জেলায় ডিজিটাল বুথ স্থাপনের জন্য আবেদন জানায়। পরবর্তীতে সিএসই তা অনুমোদনের জন্য বিএসইসিতে পাঠিয়েছে। সিএসই গত ৪ ও ৭ জানুয়ারি দু’টি পৃথক চিঠিতে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ডিজিটাল বুথ স্থাপনের অনুমোদন চেয়েছে।

এদিকে, বিএসইসির নির্দেশনা জারি হওয়ার পর কেবলমাত্র আইল্যান্ড সিকিউরিটিজই প্রথম ডিজিটাল বুথ স্থাপনের জন্য যথাযথভাবে আবেদন করেছে। এছাড়া ডিজিটাল বুথের জন্য যেসব আবেদন জমা পড়েছে, তা সবগুলোই নির্দেশনা জারির আগে করা হয়েছে। ফলে ওই ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ডিজিটাল বুথ স্থাপন সংক্রান্ত নির্দেশনা পরিপালন না করেই আবেদন জানিয়েছে।

এতে তাদের ডিজিটাল বুথ স্থাপনের আবেদন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনায় নিচ্ছে না বিএসইসি। তাই ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ডিজিটাল বুথ স্থাপনের জন্য পুনরায় আবেদন করতে হবে। ইতিমধ্যে বেশকিছু ব্রোকারেজ হাউজ সব শর্ত পালন সাপেক্ষে ডিজিটাল বুথ স্থাপনের বিষয়ে পুনরায় স্টক এক্সচেঞ্জে আবেদন জানিয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএসইসি মনে করে, দেশে ও বিদেশে ডিজিটাল বুথ স্থাপনের ফলে শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি দেশের সব নিবাসী ও অনিবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সহায়ক হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘বিএসইসির জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কয়েকটি জায়গায় ডিজিটাল বুথ স্থাপনের জন্য আবেদন জানিয়েছি। সেসব জায়গায় কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে কাজ চলছে। আমরা বিদেশেও বুথ খোলার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি।’

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার সাফফাত রেজা বলেন, ‘নির্দেশনা জারির পর সে অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ডিজিটাল বুথ খোলার জন্য ধাপে ধাপে আবেদন করছি। আমাদের লক্ষ্য রয়েছে, সে অনুযায়ী কাজ করছি। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি কয়েকটি দেশেও ডিজিটাল বুথের শাখা খোলার বিষয়ে কাজ চলছে।’

তবে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডিজিটাল বুথের জন্য নতুন করে এখনও আবেদন করা হয়নি। আমরা এখন ফিজিবিলিটি স্টাডি করছি, সেটা সম্পন্ন করে আবেদন করা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে এবং চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি কানাডার টরেনটোতে পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজকে ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমোদন দেয় বিএসইসি।