দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালকেরা নিয়মিত বোর্ড মিটিংসহ অন্যান্য কমিটির মিটিং করলেও ভবিষ্যত নিয়ে তাদের কোন পরিকল্পনা নেই। কিভাবে ডিএসইর ব্যবসা বাড়ানো যায় এবং উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা যায়, এ নিয়ে তারা আলোচনা বা কার্যকরি কোন সিদ্ধান্ত নেয় না। যাতে করে কোন স্টক এক্সচেঞ্জটির অগ্রগতিও হয় না। যে কারনে স্টক এক্সচেঞ্জটির কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ডিএসইর আইটি অ্যাডভাইজরি ও স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলোপমেন্ট টিমের সঙ্গে বৈঠকে এই অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিশন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। এদিন অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি ডিএসইকে চলতি মাসের মধ্যে ব্যবসা উন্নয়ন নিয়ে পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। একইসঙ্গে পরবর্তী প্রতি মাসের মাধ্যমে সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের আপডেট তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

ডিএসইর গত ৬ মাসে ১৫-২০টি বোর্ড মিটিং ও আইসিটি নিয়ে প্রায় ১০টি মিটিং করার স্বার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় কমিশনের পক্ষ থেকে। এই মিটিংয়ের ফলাফল কি, তাও জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া আইটিকে কেন্দ্র করে আজকের মিটিং করা হলেও ডিএসইর এ সংশ্লিষ্ট কমিটির ৫ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন অংশগ্রহন করায় হতাশা প্রকাশ করে কমিশন। তবে এই মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে ফি না থাকায় অন্যরা আগ্রহী হয়নি বলে অনেকে মনে করেন।

বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের ব্যবসা বাণিজ্য বাড়তে থাকলেও ডিএসইর প্রস্তুতির অভাব দেখছি। এই সমস্যা কাটিয়ে তোলার জন্য তাদেরকে এই জানুয়ারি মাসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা দিতে বলেছি। এতে সময় উল্লেখ করে করে কতদিন ধরে কি করবে, তা জানাতে বলেছি। একইসঙ্গে পরবর্তী মাসের শেষ কার্যদিবসে আপডেট দিতে বলেছি।

তিনি বলেন, বিএসইসি, সিএসই বা সিডিবিএলকে শুধু একা ডিজিটালাইজড হলে হবে না। এখানে সবপক্ষকেই পারস্পরিক সুবিধার্থে ডিজিটালাইজড হতে হবে। অন্যথায় কাস্টমারদেরকে সন্তুষ্টির ব্যর্থতায় ডিএসইকে লুজার হতে হবে। কিন্তু দেশের ভবিষ্যত উজ্জল সত্ত্বেও ডিএসই কেনো এই বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে, তা আমার কাছে বোধগম্য না।

কমিশনের কাজ সবদিক থেকে সহযোগিতা করার কথা জানিয়ে বিএসইসির এই কমিশনার ডিএসই কর্তৃপক্ষকে বলেন, আপনারা যেকোন বিষয়ে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা সেখানেই সাহায্যের চেষ্টা করব। যেমন অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (ওএমএস) সমস্যার কথা বলেছে। এখন সবাই যদি এক জায়গায় অর্ডার করতে থাকে, তাহলে তো ধীরগতির হয়ে যাবে।

তাই এপিআইয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অর্ডার দিয়ে বসে থাকে, কিন্তু বাস্তবায়ন করে না। যেমন ১০ হাজার অর্ডার দেয়, কিন্তু বাস্তবায়ন করে ১০০-১৫০টি। এগুলো সমস্যার কারন হয়ে দাড়াঁয়। এই বিষয়টি জরিমানা করে হলেও সমাধানের জন্য বলেছি।

শেখ শামসুদ্দিন বলেন, ডিএসইর আইটি কমিটিতে সক্ষম জনবলের অভাব রয়েছে। এই কমিটিতে একেএম মাসুদ ছাড়াতো দক্ষ লোক নেই। এজন্য তাদেরকে ওই কমিটিতে এই খাতে সমৃদ্ধ জনবল সংযুক্ত করার জন্য বলেছি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে জনবল নিতে পারে। ওখানে অনেক বিশেষজ্ঞ আছে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ৩ হাজার বা ৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হওয়ার বিষয়টি ডিএসইর পর্ষদ এখনো অনুধাবন করেনি। যে কারনে টেকনিক্যাল টিমও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে কিছু বলছে না। তাদের ব্যবসা পরিকল্পনাই নাই।

ভবিষ্যত ভাবনা নিয়ে ডিএসই এর আগে কখনো আজকের মতো মিটিং করেনি বলে জানান বিএসইসির এই কমিশনার। তিনি বলেন, ইতিহাসের প্রথমবারের মতো ভবিষ্যতে করণীয় নিয়ে আজকে ডিএসই মিটিং করল।

এর আগে পরিস্থিতির আলোকে মিটিং করেছে। অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক সাইফুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ডিএসইর আইসিটি কমিটির প্রধান ও স্বতন্ত্র পরিচালক একেএম মাসুদ, পরিচালক শাকিল রিজভী, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোওয়ারি, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মো. জিয়াউল করিমসহ অন্যান্যরা অংশগ্রহণ করেন।