দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকের সামান্য উত্থান হলেও লেনদেন হ্রাস পেয়েছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন অর্ধেক নেমে আসায় দু:চিন্তায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগের সুরে বলেন, হঠাৎ এমন কি ঘটলো যে লেনদেন ২৪ শত কোটি ঘরে গেলে, এখন আর লেনদেন প্রায় ১২ শত কোটির ঘরে চলে আসছে। তবে হঠাৎ এরকম লেনদেন কমা বাড়ার নিয়ে দু:চিন্তার কোন কারন নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে লেনদেন বাড়বে কমবে এটা পুঁজিবাজারের নিয়মিত ঘটনা। এর মধ্যেও পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকাদের আস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যক্তি কেন্দ্রীক কারসাজিকারীদেরও শাস্তির আওতায় আনছে, এটা পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়াবে।’ টানা চাঙ্গাভাব শেষে পুঁজিবাজারে হঠাৎ স্থবিরতা। টানা ১০ কার্যদিবস গড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন দেখলেও চলতি সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবেই কমছে লেনদেন।

বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২১৩ কোটি টাকা, যা গত ২২ ডিসেম্বরের পর সবচেয়ে কম। বুধবারের তুলনায় লেনদেন কমেছে ২০৩ কোটি টাকা বা প্রায় ১৫ শতাংশ। ২২ ডিসেম্বর লেনদেন ছিল ৯৭৫ কোটি টাকা। এরপর দুই হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে পাঁচ দিন। গত সপ্তাহে টানা তিনদিন লেনদেন হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। গত চার কার্যদিবস ধরেই পুঁজিবাজারে লেনদেন কমার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

এদিকে এই মুহুর্তে লেনদেনের ধারাবাহিকা ধরে ও রাখতে হলে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দর বাড়তে হবে। কারন বর্তমান বাজারের ভারসাম্য তুলনা করলে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম তলানিতে পড়ে আছে। এদিকে গত নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে অর্থাৎ এক মাসে ব্যাংকিং খাতের ২৩ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। যা ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর।

ডিসেম্বরে এ খাতের আর্থিক বছর শেষ হওয়ায় চলতি মাস থেকেই এ খাতের কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। সন্তোষজনক হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হলে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণে ঘুরে দাঁড়াতে পারে ব্যাংকিং খাত। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে, বাড়বে লেনদেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) জানা যায়, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক বেড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত ২৩ ব্যাংকে। তবে বিনিয়োগ কমেছে ৭ ব্যাংকে। অপরদিকে পরিচালকদের বিনিয়োগ বেড়েছে ২ ব্যাংকে, কমেছে ৩ ব্যাংকে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫ ব্যাংকে। বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে ৭ ব্যাংকে, কমেছে ৯ ব্যাংক এবং বিনিয়োগ অপরিবর্তিত ১০ ব্যাংক। ।

বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ও লেনদেনের অবস্থান লেনদেনের এমন ধীরগতি সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজার ভালো হচ্ছে এটা পুরানো খবর। এখন দেখতে হবে এই ভালো কতটা দীর্ঘমেয়াদী হয়, যা নির্ভর করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন পদক্ষেপের উপর।’ তিনি বলেন, ‘লেনদেন বাড়বে কমবে এটা পুঁজিবাজারের নিয়মিত ঘটনা। এর মধ্যেও পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকাদের আস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যক্তিকেন্দ্রীক কারসাজিকারীদেরও শাস্তির আওতায় আনছে, এটা পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়াবে।’

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেশ কিছু সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজার গত ডিসেম্বর থেকেই চাঙ্গা। এই সময়ে বাজারে সূচক বেড়েছে এক হাজার আটশ পয়েন্টের বেশি। লেনদেনে ধীরগতি দেখা গেলেও বাজারে সূচকের পতন হয়নি। বরং আগের দিনের তুলনায় আট পয়েন্ট বেড়ে এখন সূচকের অবস্থান পাঁচ হাজার ৩৬ পয়েন্ট। গত প্রায় এক মাস ধরে আগ্রহের তুঙ্গে থাকা রবি ও বেক্সিমকোর শেয়ার এদিনও লেনদেন হয়েছে সর্বাধিক পরিমাণে।

এর মধ্যে রবির দাম এক টাকা ৪০ পয়সা কমলেও বেক্সিমকোর দাম বেড়েছে ৬০ পয়সা। খাতওয়ারী হিসাবে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি কমেছে বিমা খাতে। এই খাতের ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৪২টি।

বাজার মূলধনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা ব্যাংক খাতে বিনিয়োগকারীরা যে ফিরতে শুরু করেছে, সেটি দেখা গেছে বৃহস্পতিবারও। তালিকাভুক্ত ৩০টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে দুটি কোম্পানি, অপরিবর্তিত ছয়টি, বাকি ২২টিরই দর বেড়েছে, যদিও দর বৃদ্ধির হার খুবই কম।