পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে বিনিয়োগকারীরা
মুশফিক রায়হান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন কমলেও সূচকের সামান্য উত্থানে শেষ হয়েছে। তবে টানা উত্থানের পর হঠাৎ করেই থমকে গেছে পুঁজিবাজার চিত্র। এ সঙ্গে কমছে বাজার মূলধনও। এতে বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ২৫ শত কোটি ঘরের লেনদেন এখন হাজার কোটি টাকার নিচে।
ফলে লেনদেন এতে কমে যাওয়া দু:চিন্তার কারন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।তবে বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন অধিকাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ বড় বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে বদলে গেছে বাজার চিত্র।
এদিকে বড় পতনের পর যে কয় দিন দিনের শেষে সূচকের সামান্য উত্থান দেখা গেছে, তার প্রতিটি দিনেই কমতে দেখা যায় অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দুচিন্তা আরও ভারি হচ্ছে। বিশেষ করে ভালো মৌল ভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারদর কমে যাওয়া তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল থাকবে কি না এ নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন তারা।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন বাজারচিত্র ভালো থাকায় সম্প্রতি এখান থেকে মুনাফা তুলেছেন সিংহভাগ বিনিয়োগকারীরা। ফলে সেল প্রেসার বা বিক্রয় চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাজারের এ পরিস্থিতি হয়েছে। যারা শেয়ার বিক্রি করেছেন, এখন তারাই বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন; ফলে পরিস্থিতি কিছুটা থমকে আছে। তবে এ পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না বলেও মত দেন তারা।
এ বিষয় জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে টানা উত্থান বা টানা পতন কোনোটাই ভালো নয়। তবে আমি মনে করি, ‘এখন বাজার পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। বিএসইসি কর্তৃপক্ষও বাজার নিয়ে কাজ করছে। ফলে এখনই পুঁজিবাজার নিয়ে চিন্তার কিছু আছে বলে মনে হয় না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ঊর্ধ্বমুখী বাজারে শেয়ার বিক্রি করে এখন কম দরে শেয়ার ক্রয়ের জন্য ক্রেতার ভূমিকায় রয়েছেন। একই ধরনের আচরণ করছেন সুযোগসন্ধানী কিছু ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে বাজারে প্রকৃতচিত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, এখন মানি মার্কেট থেকে পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো। পাশাপাশি এখনও মার্কেট বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। এখানে কেউ বুঝেশুনে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে বাজারের সঙ্গে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হচ্ছেন। তাই এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার থেকে প্রতারিত হওয়ার শঙ্কা কম।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল করে দেয়া হয়েছে। অনিয়ম করার বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। কারসাজি রোধে সজাগ রয়েছে বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ভূমিকার কারণে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে।
তারা বলছেন, এখন যেহেতু পুঁজিবাজার পতন কাটিয়ে উঠছে তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। বিনিয়োগকারীদের উচিত যে কোনো পরিস্থিতি মানিয়ে নেয়া। এদিকে উভয় পুঁজিবাজারের প্রধান প্রধান সূচক বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বাড়লেও আগের কার্যদিবসের মতো হাজার কোটি টাকার নিচেই রয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৯৪১ কোটি ৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯.৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭২৪.৩৫ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ০.৫১ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ১২.৬০ পয়েন্ট এবং সিডিএসইটি ৬.৮৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২৮০.৩৯ পয়েন্টে, ২১৯১.২০ পয়েন্ট এবং ১২৩০.৯৩ পয়েন্টে।
ডিএসইতে ৩৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৩৪টির বা ৩৭.৩৩ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ১৩১টির বা ৩৬.৪৯ শতাংশের এবং ৯৪টির বা ২৬.১৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১১.২৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭০০.০৪ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ২৫৪টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৯টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮৬টির আর ৫৯টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।