এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা পাঁচ কার্যদিবস দরপতনের পর অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। তবে ঘুরে দাঁড়ালেও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে আতঙ্ক কাটছে না। কারন লেনদেন জানুয়ারী মাসে রেকর্ড সৃষ্টি করলেও টানা কয়েক কার্যদিবস দরপতনে সাত শত ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলেছেন, দরপতন নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। বাজার যখন একটানা বাড়তে থাকে তখন একটু কারেকশন স্বাভাবিক বিষয়। আর গত কয়েক দিনে তাই ঘটছে।

অন্যদিকে বুধবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত বলেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যাওয়া নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কমিশন নানাভাবে চেষ্টা করছে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়াতে। আমরা দেখেছি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোনো কোনো সময় কোম্পানির শেয়ারের অতিমূল্য নির্ধারণ করে। এখন সেটি নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সবাই যাতে শেয়ার পায়, এ জন্য সবাইকে আনুপাতিক হারে আইপিও শেয়ার দেওয়ার পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে।’

এদিকে বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সে ১৭.১৭ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। শরিয়াভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচকে যোগ হয়েছে ৪.৪৮ পয়েন্ট, আর বাছাই করা ৩০টি কোম্পানির সূচকে যোগ হয়েছে ২৭.০১ পয়েন্ট। সূচকের উত্থানের দিন আরও একটি প্রবণতা দেখা গেছে।

নতুন কোম্পানি হিসেবে মঙ্গলবার লেনদেন শুরু করা মীর আখতার হোসাইন লিমিটেডের শেয়ার দর এদিনও ৫০ শতাংশ বাড়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। দর বেড়েছে ২৩ শতাংশ। সাম্প্রতিককালে নতুন শেয়ারে দ্বিতীয় দিন এত কম দাম বাড়তে দেখা যায়নি।

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী শিশির বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পুঁজিবাজার উত্থান থাকার পর পতন হয়েছিল। এ সময়ে অনেক শেয়ারের দর কমেছে। বিশেষ করে রবির শেয়ারে দর গত কয়েকদিনে ৭১ টাকা থেকে কমে ৪৬ টাকায় নেমেছে। ফলে এখন রবিতে নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানিতেও বিনিযোগ আগ্রহী হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।’

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজারে উত্থান দেখা যায়। চালু থাকে শেষ সপ্তাগের আগ পর্যন্ত। এই সময়ে সূচকে যোগ হয় এক হাজার পয়েন্টের বেশি। তবে পাঁচ হাজার ৮০০ পয়েন্ট অতিক্রম করার পর দাম ও সূচক কমতে থাকে, যাকে বাজার বিশ্লেষকরা স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন বলতে থাকেন। তবে টানা বড় পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয় শঙ্কা। এটি মূল্য সংশোধন নাকি পতন সে প্রশ্ন উঠে। বুধবারের বাজার অনেক প্রশ্নের সমাধান দিতে পারে এমন আশা করা হচ্ছিল।

লেনদেনের শুরুতেই সূচকে ২০ পয়েন্ট যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতিবাচক বাজারের আশা করা হয়। তবে তবে আধা ঘণ্টার মধ্যে সূচক ১৭ পয়েন্ট হারিয়ে ফেলার পর আবার উদ্বেগ তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে এরপর থেকেই আবার বাড়তে থাকে সূচক। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সূচকে ৪০ পয়েন্ট যোগ হয়। তবে পরের দুই ঘণ্টায় উঠানামা করতে থাকে আবার।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘উত্থান পতন স্বাভাবিক বিষয় পুঁজিবাজারে। বর্তমানে লেনদেনে প্রথম দিকে থাকা রবির শেয়ারের দর অনেক বেশি বেড়েছিল, এখন তার সংশোধন হয়েছে। এছাড়া বেক্সিমকোর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ফলে কয়েকদিনের পতনে এগুলো দাম কমেছে।’

বিনিয়োগকারীরা সচেতন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রবি, এনার্জিপ্যাক পাওয়ারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রথম তিন থেকে চার চার টানা বেড়েছে। দাম বাড়ার পর আইপিওপ্রাপ্তরা শেয়ার বিক্রি করেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেগুলো কিনে এখনও লোকসান গুনছে। কিন্ত মীর আক্তারের ক্ষেত্রে তা হয়নি।’ পুঁজিবাজারে ক্রমাগত যেসব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে, সেসব কোম্পানির শেয়ার কেনা থেকে বিরত থাকলেই সাধারণ বিনিয়াগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষা হবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

এদিকে ডিএসইতে ৭৯৪ কোটি ৬১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ৯১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭০২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭.১৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮১.৮৬ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৪.৪৮ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ২৭.০১ পয়েন্ট এবং সিডিএসইটি ৪.৯০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২৫০.৫৭ পয়েন্টে, ২১৩৬.৪৬ পয়েন্ট এবং ১১৯৪.৫৭ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ৩৫৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৬৭টির বা ১৮.৯২ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ১৮০টির বা ৫০.৮৫ শতাংশের এবং ১০৭টির বা ৩০.২৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩১.৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৬৬.২০ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ২২৫টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দর বেড়েছে, কমেছে ১২৫টির আর ৫০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।