তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে টানা দুই দিন যে দরপতন দেখল, তা কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে করছেন পুঁজিবাজারের নীতি নির্ধারকরা। গত কয়েক দিনের দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হারিয়েছে। মুলত নতুন বিনিয়োগকারীরা আবার পুঁজিবাজার নিয়ে অনিশ্চতায় দিন কাটছেন। বাজারের এ পতন স্বাভাবিক পুঁজিবাজারের লক্ষণ নয়। এছাড়া গত দুই দিনের দরপতন দেখে মনে হচ্ছে কোন গোষ্ঠী ফের পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, গত দুই দিনের দরপতন অস্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ। তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির জোড়াল পদক্ষেপ চেয়েছেন। আগের দিন ১৪২ পয়েন্টর পর এবার সূচক পড়ে ১২৮ পয়েন্ট। দর হারায় দুইশটিরও বেশি শেয়ার। বিনিয়োগকারীরা যে আতঙ্কিত তার প্রমাণ পাওয়া যায় মূল্য হারানোর শতকরা হারে। আরও বেশি পড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় লোকসানেই শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন তারা।

দুই দিনে ২৭০ পয়েন্ট পতনের প্রতিক্রিয়ায় আবু আহমেদ বলেন, ‘আজ যে পতন হয়েছে তা স্বাভাবিক পতন নয়। রোববার বিএসইসির নজরদারির প্রেক্ষিতে ধারণা করা হয়েছিল, আজ বাজার কিছুটা ভালো হবে। কিন্ত তা হয়নি। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও জোড়ালো ভূমিকা পালন করতে হবে।’ গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএসইসির নেতৃত্বে রদবদল আসার পর এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত এসেছে যাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই চাঙ্গা হতে থাকে বাজার। বাড়তে থাকে সূচক, লেনদেন। এক দশক আগে মহা ধসে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা যখন আশান্বিত হয়ে উঠেছেন, তখনই ছন্দপতন। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ ধরে প্রতি দিনই অল্প করে যখন সূচক পড়ছিল, তখনও এ নিয়ে খুব একটা উদ্বেগের কথা বলেনি কেউ। কারণ, এক হাজার আটশ পয়েন্ট উত্থানের পর মূল্য সংশোধনের যে প্রক্রিয়া, সেটিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। গত

সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে সূচকে ৮০ পয়েন্টের বেশি যোগ হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আশান্বিত হয়ে উঠে। তবে রোববার ১৪২ পয়েন্ট পতন জাগায় বিস্ময়। সেদিন বিএসইসি জরুরি বৈঠকে বসে। এই পতন কারসাজি ধারণা তৈরি হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থারই। ডেকে আনা হয় সারভেইল্যান্স টিমকে।

জানা যায়, ১১টি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে অস্বাভাবিক বিক্রয় চাপ এসেছে। সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার থেকে আরও বেশি নজরদারি হবে। এর মধ্যে রাতে আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আসে সার্কুলার। ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ বিতরণের নীতিমালা জারি হয় এতে। বলা হয়, সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া হবে।

ডিবিএ সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান কমিশনের উপর আস্থা রেখে সাধারন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আসছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থঅর কাজ তাদেরই এই আস্থা ধরে রাখা। তবে পুঁজিবাজার দরপতন হওয়ার মত কোন কারন দেখছি না। পুঁজিবাজারের সার্বিক বিষয় নিয়ে বিএসইসিতে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পুঁজিবাজারের যে মন্দা তার পেছনে কী কারণ তা অনুসন্ধানে সার্ভিল্যান্স সিন্টেম জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন বলেন, ‘বাজারে উত্থান-পতন থাকবেই। উত্থান ও পতনের বিষয়ে কমিশনের কোন হস্তক্ষেপ নেই। তবে উত্থান-পতন আইন-কানুন অনুযায়ী হচ্ছে কি না, কোনো ধরনের কারসাজি রয়েছে কি-না সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা কমিশনের দায়িত্ব। সেটা আমরা করে যাব।’
মার্জিন ঋণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ারও তাগিদ দিয়েছে বিএসইসি। সংস্থাটির কমিশনার বলেন, ‘যাবে ঋণ দেয়া হচ্ছে তিনি তা পরিশোধ করতে পারবে কি না সেটি আগে যাচাই করা উচিত। তিনি ঋণ নিয়ে কী শেয়ার কিনবেন সেটাও নজরদারি করা উচিত।’