দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পতনের পুঁজিবাজারে প্রায় সব খাতের শেয়ারের দামই কমছে। তবে এরপরও ঝুঁকিতে রয়েছে প্রকৌশলী খাতের ৯ কোম্পানি শেয়ার। এসব শেয়ারের বাজারদর এখন যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি এড়াতে পারেন না। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে ৯ কোম্পানি লোকসানের কবলে রয়েছে। সম্প্রতি কোম্পানিগুলোর অর্ধবার্ষিক অনিরীক্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্যমতে, প্রকৌশল খাতের কোম্পানিগুলো ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে অর্ধবার্ষিক অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ৯ টি লোকসানের কবলে রয়েছে। এছাড়া আয় কমেছে ১৩ টির। তবে বাকি কোম্পানিগুলো আলোচ্য প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশি লোকসানের কবলে রয়েছে ইয়াকিন পলিমার। কোম্পানির ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫৬ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল ১ পয়সা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে কোম্পানি লোকসান ৫৭০০ শতাংশ বেড়েছে।

লোকসানের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশবন্ধ পলিমার। কোম্পানির গত ডিসেম্বর শেষে হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল ৫ পয়সা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে কোম্পানির লোকসান বেড়েছে ৭৮০ শতাংশ।

লোকসানের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে রেইনইউক যজ্ঞেশ্বর। কোম্পানির ডিসেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসানের পরিমাণ ৮ টাকা ৭০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৭১ পয়সা।

আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে কোম্পানি ৬০৯ শতাংশ লোকসান বেড়েছে। এছাড়া যেসব কোম্পানি লোকসানের কবলে রয়েছে সেগুলো হচ্ছে: আজিজ পাইপস, আফতাব অটোস, ন্যাশনাল টিউবস, এটলাস বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ক্যাবলস, অলিম্পিক এক্সেসরিজ।

এদিকে কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আজিজ পাইপস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। করোনাভাইরাস মহামারির (কভিড-১৯) কারণে কাঁচামাল সরবরাহকারী যথাসময়ে সরবরাহ না করায় প্রধান কাঁচামাল ‘পিভিসি রেসিন’ এর অভাবে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া স্থানীয় বাজারে কাঁচামালের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পেয়েছে এতে বর্তমান বাজার পণ্যমূলের চেয়ে উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি হবে। যার ফলে কোম্পানিটির প্রস্তুত পণ্য বাজারজাতকরণের বেলায় ভুগতে হতে পারে। এমতাবস্থায় গত ১০ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ থেকে কোম্পানিটির কারখানার সি-শিফটের উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। পিভিসি রেসিন অর্থাৎ কাঁচামাল সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও উৎপাদন শুরু করবে কোম্পানিটি।

এদিকে ভবিষ্যতে যথাযথভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে আজিজ পাইপস লিমিটেডের। কোম্পানিটির ইকুইটি ধারাবাহিকভাবে নেতিবাচক হওয়ার পাশাপাশি ঋণ পরিষেবা এবং সুদের পরিষেবার অনুপাত কম হওয়ায় এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোম্পানিটির গোয়িং কনসার্ন হিসেবে ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতায় সন্দেহ থাকায় কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়েছে কোম্পানিটির নিরীক্ষক। কোম্পানিটির নিরীক্ষক আরও তিনটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।

প্রথমত, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ২৪০ (৩) ধারা অনুসারে শ্রমিকদের প্রাপ্ত কোম্পানির মুনাফার অংশ প্রদান করা হয়নি এবং শ্রমিকদের প্রাপ্ত ছয় লাখ ১২ হাজার ৮৭৮ টাকার বিনিময়ে কোনো ইন্টারেস্টও দেখানো হয়নি। দ্বিতীয়ত, কোম্পানিটির স্টক রেজিস্টার না থাকায় ১১ কোটি ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৫ টাকার ইনভেনটরিজের যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তৃতীয়ত, কোম্পানির ভ্যাট রিটার্নের সঙ্গে ক্রয়ের পরিমাণের অমিল ধরা পড়েছে।

সম্প্রতি ৩০ জুন ২০২০ সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য এক শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (উদ্যোক্তা ব্যতীত) ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২৬ পয়সা এবং ৩০ জুন ২০২০ তারিখে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ২২ পয়সা (লোকসান)। আর ওই সময়ে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে আট টাকা দুই পয়সা।

প্রকৌশল খাতের ‘বি’ ক্যাটেগরির কোম্পানিটি ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন পাঁচ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট ৫৩ লাখ ৪৭ হাজার ১২৫টি শেয়ার রয়েছে। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক চার দশমিক ৭২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৬১ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার।

সম্প্রতি কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২০) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে সাত পয়সা লোকসান অথচ আগের বছরে ইপিএস ছিল ২২ পয়সা। আর ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ২৮ পয়সা লোকসান। ২০২০ সালের ৩০ জুন তারিখে যার পরিমাণ ছিল ১৪ টাকা ২২ পয়সা। এই প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে ৪৩ পয়সা আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল পাঁচ টাকা ৩০ পয়সা।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, যেহেতু এসব শেয়ারের ঝুঁকি বেশি সেহেতু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই ধরনের শেয়ার বেঁচে না নেওয়াই ভালো। তবে একটি খাতের গড় পিইর বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ওই খাতের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত কী তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

এ বিষয় জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, একটি কোম্পানি আর্থিক অবস্থা দেখেই ওই কোম্পানির গতিবিধি বোঝা যায়। তবে আর্থিক অবস্থা ভালো থাকার পরও যদি কোনো শেয়ারের দর অধিক হয় এবং মূল্য-আয় অনুপাত বেশি হয়, তবে ওই শেয়ারে বিনিয়োগ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী সেটা করেন না। দ্রুত লাভের আশায় তারা উচ্চ পিই-রেশিওধারী শেয়ারে বিনিয়োগ করতে দুবার ভাবেন না।