মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আইপিও শেয়ার রবিতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। ফলে আইপিও শেয়ার এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুলত রবিতে বিনিয়োগ করে কবে নাগাদ পুঁজি ফিরে পাবে তা নিয়ে দু:শ্চিন্তায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। আর এ রবি শেয়ারে এমন কর্মকান্ডে বাজারের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে বিনিয়োগকারীরা।

অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে ডিভিডেন্ড ঘোষণা কেমন আসছে ডিভিডেন্ড তা নিয়ে চলছে তা গুঞ্জন। মুলত পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত রবি আজিয়াটা লিমিটেড। ইতিহাসের সবচেয়ে কম বা ৪ পয়সার শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) নিয়ে পুঁজিবাজারে আসে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটা।

যে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোনের আগে ব্যবসা শুরু করলেও মাঝে মধ্যেই লোকসান গুণে। এরমধ্য দিয়েই পুঁজিবাজারের ইতিহাসে আইপিওতে সর্বোচ্চ শেয়ার ইস্যু করে রবি। রবি আজিয়াটার ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে মাত্র ৪ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে ১২.৬৪ টাকার।

রবি আজিয়াটা ১৯৯৫ সালের ২২ অক্টোবর গঠিত হয় এবং একইদিনে ব্যবসা শুরু করে। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোন গঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১০ অক্টোবর। এই ১ বছর পরে গঠিত হয়েও গ্রামীণফোন এখন বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। আর রবি আজিয়াটা এখনো লোকসান থেকে মুনাফা করতে লড়াই করে যাচ্ছে। অথচ গ্রামীণফোনের থেকে রবির কয়েকগুণ বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে।

গত ২৪ ডিসেম্বর বহুজাতিক কোম্পানি রবির শেয়ার লেনদেন শুরু হলে তৈরি হয় হুলস্থুল। ১৪ কার্যদিবস টানা সর্বোচ্চ বেড়ে দাম দাঁড়ায় ৭৭ টাকা। সেদিনই আবার দাম কমে হয় ৭১ টাকায়। সেই শেয়ারই এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা ৮০ পয়সা। সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয় গত ১২ জানুয়ারি। সেদিন লেনদেন হয় ছয় কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার। সেদিন দাম ছিল ৬৩ টাকা ২০ পয়সা।

এই দামে যারা শেয়ার কিনেছেন, তারা প্রতি শেয়ারে লোকসানে আছেন প্রায় ২০ টাকা। সাড়ে ছয় কোটি শেয়ারে লোকসান দাঁড়ায় ১৩০ কোটি টাকার বেশি। ১৪ জানুয়ারি ৭০ টাকায় লেনদেন হয়েছে এক কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬টি শেয়ার। সেদিন যারা শেয়ার কিনেছেন, তারা লোকসানে আছেন ২৬ টাকার মতো। তাদের আটকে আছে ৫০ কোটি টাকার মতো।

১৭ জানুয়ারি তিন কোটি ৯৯ লাখ ৯৮ হাজার ৬২৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৪ টাকা ৫০ পয়সায়। সেদিন যারা কিনেছেন, তারা শেয়ার প্রতি ২০ টাকার মতো লোকসানে আছেন। এই হিসাবে প্রায় ৮০ কোটি টাকা আটকে আছে সেদিনের বিনিয়োগকারীদের।

১৮ জানুয়ারি ৫৮ টাকা ৫০ পয়সায় তিন কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ৮৭৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সেদিন যারা কিনেছেন, তারা লোকসানে আছেন ১৪ টাকা দরে। সেদিনের বিনিয়োগকারীদের আটকে গেছে ৫৫ কোটি টাকার মতো। ১৯ জানুয়ারি দুই কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৭২টি শেয়ার লেনদেন হয় ৫৭ টাকা ৪০ পয়সায়। ১৩ টাকা করে লোকসানের হিসাবে সেদিনের বিনিয়োগকারীদের আটকে দেখে ৩০ কোটি টাকার বেশি।

২০ জানুয়ারি দুই কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৯৬টি শেয়ার বিক্রি হয়। সেদিন ক্লোজিং দাম ছিল ৬৩ টাকা ১০ পয়সা। ১৯ টাকা করে লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীদের আটকে গেছে ৪২ কোটি টাকার বেশি।

এই কয় দিনেই রবির শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন ৫২০ কোটি টাকার বেশি, অথবা তাদের বিনিয়োগ আটকে গেছে। এর আগে পরের কয়েকটিদের লেনদেন হিসাব করলে টাকার অংকটা যে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, সেটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

বড় লোকসানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এনার্জি প্যাকের শেয়ারেও। ৩১ টাকায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার গত ১৯ জানুয়ারি লেনদেন শুরু করে। মূল্য টানা বেড়ে এক পর্যায়ে উঠে যায় ১০১ টাকায়। সময় লাগে মাত্র পাঁচ কার্যদিবস। এরপর কমতে কমতে শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ৫১ টাকা ৭০ পয়সায়। এই কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ২৬ জানুয়ারি। সেদিন হাতবদল হয় এক কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার ৫৭৬টি।

সেদিন দাম ক্লোজ হয় ৮৩ টাকা ৪০ পয়সা। সেদিন যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের প্রায় ৪০ টাকা করে হাওয়া হয়ে গেছে। এদের আটকে গেছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সেদিনের পর সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ জানুয়ারি, হাতবদল হয় ৪৭ লাখ চার হাজার ৫৭০টি শেয়ার। সেদিন দাম ছিল ৭৬ টাকা ৪০ পয়সা। সেদিন যারা কিনেছেন, তাদের শেয়ার প্রতি ২৫ টাকা করে হাওয়া হয়ে গেছে।

তাদের আটকে গেছে ১২০ কোটি টাকার বেশি। ২৮ জানুয়ারি লেনদেন হয় ৩৪ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৬টি শেয়ার, দাম ছিল ৭১ টাকা ৭০ পয়সা। সেদিন যারা কিনেছেন, তারা লোকসানে আছেন ২০ টাকা করে। তাদের আটকে গেছে ৬৮ কোটি টাকার বেশি। ৩১ জানুয়ারি লেনদেন হয় ৪৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৯টি শেয়ার। দাম ছিল ৬৬ টাকা ৪০ পয়সা।

সেদিন যারা কিনেছেন, তারা লোকসানে আছে ১৫ টাকা করে। তাদের আটকে গেছে ৭০ কোটি টাকার মতো। এই কয়দিনের লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয়েছে ৪৩৫ কোটি টাকার বেশি। এই অর্থটাও আটকে গেছে। এর আগে পরের লেনদেন হিসাব করলে হাওয়া হয়ে যাওয়া টাকার পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

গত ২ ফেব্রুয়ারি তালিকাভুক্ত হওয়া মীর আকতারের শেয়ারেও শত কোটি কারা বেশি লোকসানে বিনিয়োগকারীরা আট কার্যদিবসেই। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ার পেয়েছেন ৫৪ টাকায়। প্রথম দিন ৮১ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তে পারত। আর বেড়েছেও। দ্বিতীয় দিন বাড়ার সুযোগ ছিল ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। লেনদেন শুরুর আগেই সেই দামে ক্রয়াদেশ দেখে সন্দেহ হয় বিএসইসির।

তারা দুটি বিও হিসাবের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করে। তখন সেই ক্রয়াদেশ তুলে নেয়া হয়। আর সেদিন পরে লেনদেন হয় ৯৫ থেকে ১১৭ টাকায়। দিন শেষে ক্লোজ হয় ১০০ টাকায়। পরের দুই কার্যদিবসে দাম ১০ শতাংশ করে কমে আবার ৮১ টাকায় দাঁড়ায়। এরপর দুই দিন উঠানামা করে বৃহস্পতিবার দর দাঁড়িয়েছে ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা।

অর্থাৎ যারা দ্বিতীয় দিন ৯৫ থেকে ১১৭ টাকায় শেয়ার কিনেছে, তারা এরই মধ্যে বড় লোকসানে আছেন। এই কোম্পানির সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩ জানুয়ারি। সেদিন হাতবদল হয় ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯১টি শেয়ার। সেদিন যাকা কিনেছেন, তারা প্রতি শেয়ারে সর্বনিম্ন সাত টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৯ টাকা লোকসানে আছেন। এই শেয়ারে বিনিয়োগকারীরাও সব মিলিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা লোকসানে আছেন।