দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেয়ারবাজার তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) এর ফ্লোর প্রাইসের দর কমে যাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়, গুজব ছড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান ফ্লোর প্রাইসের আইন বিশ্লেষণ করে এমনটি দেখা যায়। বিএটিবিসি শেয়ারপ্রতি ৬০ টাকা নগদের পাশাপাশি একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি করে বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা আছে ৯০৭ টাকা ৬০ পয়সা।

ফ্লোর প্রাইসের আইন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোনো কোম্পানি যে পরিমাণে রাইট শেয়ার বা বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে তাহলে কোম্পানিটির শেয়ার দর সে অনুযায়ী এডজাস্টমেন্ট করা হয়। তবে এডজাস্টমেন্ট এর ক্ষেত্রে যদি কোন কোম্পানির শেয়ার দর নির্ধারিত ফ্লোর প্রাইজের নিচে চলে যায় সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফ্লোর প্রাইস পর্যন্ত এডজাস্টমেন্ট হবে। কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসের নিচে যেতে পারবেনা বলে আইনে বলা হয়েছে।

এদিকে বিএটিবিসি বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার পর থেকে কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস নিয়ে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়াচ্ছে একদল বাজার কারসাজি চক্র। বোনাস লভ্যাংশের পরে কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস আরো কমে যাবে বলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে তারা।

এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানি রাইট শেয়ার ও বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার পরে কোম্পানির শেয়ার দর এডজাস্টমেন্ট করা হয়। ফ্লোর প্রাইসের নিয়ম চালু হওয়ার আগে এডজাস্টমেন্টে যে দর পাওয়া যেত সেটাই নির্ধারণ করা হতো।

ফ্লোর প্রাইস নিয়ম চালু হবার পরে কোম্পানির শেয়ার দর এডজাস্টমেন্টের ক্ষেত্রে তা ফ্লোর প্রাইসের নিচে যাবে না। কারণ ফ্লোর প্রাইসের আইনে বলা হয়েছে শেয়ার দর অ্যাডজাস্টমেন্টের ক্ষেত্রে দাম সর্বনিম্ন যতই কমে যাক না কেন তা ফ্লোর প্রাইসের নিচে যেতে পারবেনা। তাই কোম্পানির ফলোর প্রাইস আইন অনুযায়ী কমে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরো বলেন, যদি ফ্লোর প্রাইসের আইন সংশোধন হয়। এবং সেখানে শেয়ার দর অ্যাডজাস্টমেন্টের ক্ষেত্রে দর ফ্লোর প্রাইসের নিচে দাম যাওয়ার বিষয়ে বলা হয় তখন সেটা হতে পারে।

অপরদিকে বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২২ মার্চ মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা হয় ৭৯৪ টাকা। এরপর কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে। স্বাভাবিক নিয়মে কোম্পানিটির সমন্বয় করা দাম হওয়ার কথা ছিল ৭২০ টাকা। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস এখনও আগের দরেই আছে।

প্রকৌশল খাতের ন্যাশনাল পলিমারের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। এই কোম্পানির প্রতি একটি শেয়ারের বিপরীতে একটি করে রাইট শেয়ার পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত ৬ জানুয়ারি রাইট শেয়ারের জন্য ক্লোজিং ডেতে এর দাম ছিল ৭১ টাকা ৬০ পয়সা। প্রতি ১০ শেয়ারে পাঁচ টাকা প্রিমিয়াম নেয়া হয়েছে। ফলে রাইট শেয়ার যোগ হওয়ার পর মূল্য সমন্বয় হওয়ার কথা ছিল ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা। কিন্তু এই শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা আছে ৫৬ টাকা ৬০ পয়সা। আর এর নিচে দাম নামতে পারছে না।

বিএটিবিসি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা আছে ৯০৭ টাকা ৬০ পয়সা। যদি এর নিচে এই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হতে না পারে, তাহলে শেয়ারধারীরা বিপুল মুনাফা পাবেন। কারণ, এখন বর্তমান বাজার মূল্যের শেয়ারধারীরা তখন তিনটি শেয়ারে পাবেন দুই হাজার ৭২২ টাকা ৬০ পয়সা। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ৩ মার্চ। সেদিন যাদের হাতে শেয়ার থাকবে, তারাই বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ পাবেন।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৭ সালে। এরপর সর্বপ্রথম ১৯৮৫ সালে চারটি শেয়ারের বিপরীতে একটি শেয়ার বোনাস ঘোষণা করে। তারপর ১৯৮৭ সালে দুটি শেয়ারের বিপরীতে একটি, ১৯৯৩ সালে তিনটি শেয়ারের বিপরীতে একটি শেয়ার ঘোষণা করা হয়।

এর ২৫ বছর পর ২০১৮ সালেও কোম্পানিটি ২০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর আগ পর্যন্ত কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৬০ কোটি টাকা। লভ্যাংশ ঘোষণার পর মূলধন দাঁড়ায় ১৮০ কোটি টাকা। আবার ২০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ অনুমোদন হলে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়াবে ৫৪০ কোটি টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে।

সরকারের কাছে আছে দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকরীদের কাছে আছে ১২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। বিদেশিদের কাছে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ শেয়ার।

উল্লেখ্য, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর শেয়ারবাজারে ধস ঠেকাতে সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ঘোষণা করা হয় ফ্লোর প্রাইস। তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির ক্ষেত্রেই এই দাম বেঁধে দেয়া আছে। বলা হয়েছে, এর নিচে কোনো অবস্থাতেই শেয়ারের দাম যাবে না।

ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানির মৌল ভিত্তি বিবেচনায় না নিয়ে বাজার মূল্যকেই বিবেচনা করা হয়। গত ২২ মার্চের আগের পাঁচ দিনের গড় মূল্য ফ্লোর প্রাইস হিসেবে ধরা হয়।