দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, ‘মুনাফা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান না করা অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে বিনিয়োগকারীরা যে প্রত্যাশা নিয়ে রবিতে বিনিয়োগ করেছিল তার সঙ্গে প্রতারণার শামিল।’ আগের বছরের তুলনায় আট গুণ মুনাফা করেও শেয়ারধারীদেরকে মুনাফা না দেয়ার ঘোষণা দেয়া রবি আজিয়াটা লিমেটেডের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএসইসি।

বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে বহুজাতিক এই মোবাইল অপারেটরকে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আগের দিন বিনিয়োগকারীদের নো ডিভিডেন্ট ঘোষণা করায় রবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মঙ্গলবার বিএসইসি কার্যালয়ে ডাকা হয়। সেখানে কোম্পানিটির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘মুনাফা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান না করা অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে বিনিয়োগকারীরা যে প্রত্যাশা নিয়ে রবিতে বিনিয়োগ করেছিল তার সঙ্গে প্রতারণার শামিল।’ এ জন্য বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের কী ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় বা লভ্যাংশের বিকল্প হিসাবে কী প্রদান করা যায় তা জানাতে বলা হয়েছে।

রবির পক্ষে বিএসইসিতে এসেছিলেন কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ শাহিদুল আলম। এ সময় বিএসইসির চেয়ারম্যান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, আব্দুল হালিম, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

পরে বিএসইসি মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ায় কমিশনে তলব করা হয়েছিল রবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের। সেখানে রবির পক্ষ কোম্পানির সচিব উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিশন। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বলা হয়। রবির পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।’

মুনাফা না দেয়ার ঘোষণায় বিএসইসি ডেকে নিয়ে কী বলেছে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য জানানো হয়নি রবি থেকে। গত সোমবার কোম্পানি বোর্ড সভায় লভ্যাংশ আসতে পারে এমন প্রত্যাশাই করেছিলেন শেয়ারধারীরা। ফলে সেদিন রবির শেয়ারের দর নয় দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ৪২ টাকা থেকে হয় ৪৬ টাকা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে রবির পরিচালনা পর্ষদ সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ বিতরণ না করে আয় কোম্পানির রিজার্ভে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে লভ্যাংশ না দেয়ার খবরের পরের দিন পুঁজিবাজারে উল্টো চিত্র দেখেছে রবি। কোম্পানিটির শেয়ার দর নয় দশমিক ১৩ শতাংশ কমে ৪৬ টাকা থেকে হয়েছে ৪১ টাকা ৮০ পয়সা। এদিন রবির দুই কোটি চার লাখ ৮১ হাজার ২৮২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকায়।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, প্রায় এক যুগের বেশি সময় পর পুঁজিবাজার বাহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর রবি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর আগের গ্রামীণফোন তালিকাভুক্ত হয়েছিল।

গ্রামীণফোনের মতো রবিও বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দেবে এমন প্রত্যাশায় লেনদেনের শুরু থেকেই রবির প্রতি আগ্রহী ছিল বিনিয়োগাকরীরা। কিন্ত সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মুনাফা পাওয়ার পরও নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করায় হতাশ বিনিয়োগকারীরা। ফলে এখন রবির শেয়ার কেনার চেয়ে এখন বিক্রি করতেই আগ্রহ বেশি। ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৩৩ পয়সা। এ হিসেবে মুনাফা দাঁড়ায় ১৭২ কোটি ৮৫ লাখ ১৮ হাজার টাকার কাছাকাছি।

এই আয় কোম্পানিটির বর্তমান রিজার্ভ এক হাজার ২৩৬ কোটি টাকায় যোগ হবে। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে রবির আয় গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছর কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছিল চার পয়সা।