দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার ফের দরপতনের কবলে পড়েছে। মাঝখানে দুইদিনের উর্ধগতির পর টানা পতন ঘটল পুঁজিবাজারটির। তবে এ দরপতনের শেষ কোথায়। এ প্রশ্ন খোদ বিনিয়োগকারীদের। বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখা মুল চ্যালেঞ্জ। তবে করোনা মহামারির মধ্যেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।সব্বোর্চ প্রায় আড়াই হাজার কোটি ঘরে লেনদেন হলেও বেশি দিন স্থায়ী ছিল না। মুলত বাজার মূলধনে বাড়তি বিনিয়োগ আস্থা বাড়িয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পুঁজিবাজার নির্ভর করে বিনিয়োগকারীদের ওপর। তাদের আস্থার ওপর পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা নির্ভরশীল। পূর্বে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে যে কমিশন ছিল, তাদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনিহা ছিল অনেক বেশি। নতুন করে পুনঃগঠিত বিএসইসির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকটা আস্থা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। এখন এ আস্থার জায়গাটিকে দীর্ঘস্থায়ী করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। বেশিরভাগ কোম্পানির দর কমার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের ভাটা ছিল দিনটিতে।

তবে সবচেয়ে বেশি পতন ঘটেছে ব্লু চিপস শেয়ার নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকটি। উভয় শেয়ারবাজারেই দিনটিতে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবস সূচক বাড়লেও বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্য সূচকের পতন হয়েছে।

বহুজাতিক কোম্পানির রবির নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা এবং বিট্রিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর বোনাসের পর ফ্লোর প্রাইসের আইন সংশোধন নিয়ে গত দুই দিন ধরেই শেয়ারবাজারে কিছুটা অস্থিরতা ছিল। বুধবারও বিমা খাত বাদে বাকি কোম্পানিগুলোতে অস্থিরতা চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক খাত ও খাদ্য খাতের শেয়ার বিক্রির চাপ বেশি ছিল।

আগের দিনের পতনের ধারা থেকে বের হয়ে এসে শেয়ারবাজারে সকালে লেনদেনের শুরুতে মূল্য সূচক কিছুটা বাড়লেও, দেড় ঘণ্টার মধ্যে পতন শুরু হয়। দাম কমতে থাকে লেনদেনে অংশ নেয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের।

লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বেড়েছে ১০১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। এর বিপরীতে পতনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১৪১টি। আর ১০২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫০৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট কমে সূচকটি ২ হাজার ১২০ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

মূল্য সূচক পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮৬৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৯৯৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৩১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ২৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার ৮০ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৬৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর।

এদিকে, সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৬ পয়েন্ট। সেখানে লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৭টির এবং ৫৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।