দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খা‌তের কোম্পানি তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের চেয়ারম্যান ও ৪ পরিচালকের জব্দকৃত ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যা‌ন্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আর্থিক অবস্থার অবনতি, নেতৃত্ব সংকট, বিদেশি ক্রেতার বিমুখ আচরণ, উৎপাদন বন্ধসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমানে কোম্পা‌নি‌টি মৃত প্রায়। ফ‌লে বি‌নি‌য়োগকারী‌দের স্বার্থ রক্ষা‌র্থে বিএসই‌সি কোম্পা‌নি‌টির প‌রিচালনা পর্ষ‌দের ব্যাংক হিসাব জ‌ব্দের সিদ্ধান্ত নেয়। ত‌বে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুুায়ী ধারাবা‌হিকভা‌বে ৭ বা‌রের অ‌ধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখার বিধান না থাকায়, বিএসই‌সি এ সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে।

তুং হাই নিটিংয়ের চেয়ারম্যান আঞ্জুমান-আরা-খানম, ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক নাফরিন মাহবুব, পরিচালক ও সিইও মো. এহসানুর রহমান, আফরিন মাহবুব এবং নাসরিন শানুর জব্দকৃত ব্যাংক হিসাব সচল করা হ‌চ্ছে।

চিঠিতে উ‌ল্লেখ করা হয়েছে, তুং হাই নিটিংয়ের চেয়ারম্যান ও ৪ পরিচালকের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে বিএসই‌সি। তবে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখার বিষ‌য়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

‌বিএসই‌সি সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট তুং হাই নিটিংয়ের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখতে বিএফআইইউ এর কাছে চিঠি দেয় বিএসইসি। এর পরে সেটি বহাল রাখতে একই বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিএফআইইউ এর কাছে ফের চিঠি দেওয়া হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থে‌কে। পরবর্তী‌তে চল‌তি বছ‌রের ১২ জানুয়া‌রি কোম্পা‌নি‌টির প‌রিচালনা পর্ষ‌দের জব্দকৃত ব্যাংক হিসাব ১৫ ফেব্রুয়া‌রি পর্যন্ত বহাল রাখ‌তে ফের চি‌ঠি দি‌য়ে বাংলা‌দেশ ব্যাংক‌কে অনু‌রোধ জানায় বিএসই‌সি।

ত‌বে বাংলা‌দেশ ব্যাংক সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, ওই চিঠির প‌রি‌প্রে‌ক্ষি‌তে ১৪ জানুয়া‌রি বাংলা‌দেশ ব্যাংক বিএসই‌সি‌কে চি‌ঠি দি‌য়ে। চি‌ঠি‌তে উ‌ল্লেখ করা হয়, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২৩(১)(গ) ধারা মোতাবেক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য লেনদেন স্থগিত করার আদেশ ৩০ দিন করে সর্বোচ্চ ৭ বার রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাকে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সর্বোচ্চ ৭ বারের অধিক ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখা এই ইউনিটের এখতিয়ার ভুক্ত নয়। ফলে সপ্তমবারের অধিক ব্যাংক হিসাব স্থগিত বহাল রাখার ক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (২০১৫ এর সংশোধনী) ১৪(১) ধারা অনুযায়ী আদালতের অনুমতি গ্রহণপূর্বক যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।

এ বিষ‌য়ে তুং হাই নিটিংয়ের পরিচালক ও সিইও মো. এহসানুর রহমানের স‌ঙ্গে একা‌ধিকবার অ‌ফি‌সের ‌টে‌লিফো‌নে যোগা‌যোগ করার চেষ্টা ক‌রা হ‌লেও নম্বর‌টি বন্ধ পাওয়া যায়।

ত‌বে এ বিষ‌য়ে জান‌তে চাই‌লে বিএসই‌সির নির্বাহী প‌রিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল ক‌রিম ব‌লেন, ‘তুং হাই নি‌টিং‌য়ের প‌রিচালনা পর্ষ‌দের জব্দ করা ব্যাংক হিসাব খু‌লে দি‌তে বলা হ‌য়ে‌ছে কি-না তা অামার জানা নেই। ত‌বে কোম্পা‌নি‌টির প‌রিচালনা পর্ষ‌দের ব্যাংক হিসাব জ‌ব্দের জন্য ৭ বার স্থি‌গিতা‌দেশ দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। এখনও পুনরায় ব্যাংক হিসাব জব্দ কর‌তে গে‌লে অাদাল‌তের অনুম‌তি প্র‌য়োজন হ‌বে।’

কোম্পা‌নি সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, ২০১৪ সা‌লে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আয় ও মুনাফা কমছে তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর নেতৃত্বসংকট ও শ্রমিকদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের শুরু থেকে তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই এরই মধ্যে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন।

মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিদেশি ক্রেতারাও। এ প্রেক্ষাপটে মূলধন সংকটের কারণে দুই বছর আগে কারখানার মজুত কাঁচামাল ও যানবাহন বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে সাভারের জিরানীতে অবস্থিত কারখানা ও মিরপুরের টেকনিক্যালের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়া আর কারও দেখা পাওয়া যায় না। অফিসে আসেন না তুং হাই নিটিংয়ের চেয়ারম্যান আঞ্জুমান-আরা-খানম, ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক নাফরিন মাহবুব, পরিচালক ও সিইও মো. এহসানুর রহমান।

অন্যদিকে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভাও (এজিএম) হয়নি। এমনকি কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধের তথ্যও বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জানায়নি কোম্পানিটি। অন্যদিকে কিছুদিন আগে ডিএসইর একটি প্রতিনিধিদল কোম্পানি পরিদর্শনে গেলে কারখানা বন্ধ থাকায় তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ফ‌লে ২০২০ সা‌লের ২৯ জুলাই তুং হাই নি‌টিং‌য়ের স্বতন্ত্র প‌রিচালক বা‌দে প্র‌ত্যেক প‌রিচালক‌কে এক কো‌টি টাকা ক‌রে জ‌রিমানা ক‌রে বিএসই‌সি।

প্রসঙ্গত, ১০৬ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ৬৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৩০.০৪ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৬.৬৫ শতাংশই এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হা‌তে আছে ৩.৩১ শতাংশ শেয়ার।