দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: স্বাস্থ্যখাতের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে রাজধানীর হাতিরপুলে ‘ব্রাইটন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ পরিচালনা করে আসছেন। ভালোই চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। আরও উন্নত সেবার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন। স্বপ্নের সহযাত্রী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি। স্বপ্ন বাস্তবায়নে আইপিডিসি’র প্রস্তাবে রাজি হয়ে ২০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ী ইফতেখার। এরপরই শুরু হয় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা ধ্বংসের নাটক। অনুমোদিত ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে চলে নানা টালবাহানা। প্রতিশ্রুতির পুরো ঋণ না দিয়ে খেলাপির জালে ফেলা হয় গ্রাহককে। এখন দেউলিয়ার পথে উদ্যোক্তা ইফতেখার।

শর্ত অনুযায়ী ২০ কোটি টাকার জামানত নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি। কিন্তু সম্পূর্ণ ঋণ বিতরণ করেনি। এতে বিপাকে পড়ে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান। টাকার অভাবে ঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারায় খেলাপিতে পরিণত হন গ্রাহক। এখন দেউলিয়া ঘোষণার হাত থেকে রক্ষা পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে ব্রাইটন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (প্রা.) লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

শর্ত অনুযায়ী ২০ কোটি টাকার জামানত নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি। কিন্তু সম্পূর্ণ ঋণ বিতরণ করেনি। এতে বিপাকে পড়ে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান। টাকার অভাবে ঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারায় খেলাপিতে পরিণত হন গ্রাহক। এখন দেউলিয়া ঘোষণার হাত থেকে রক্ষা পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে ব্রাইটন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (প্রা.) লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ঘটনাটি ঘটেছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কারসাজিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ঘটনার শুরু ২০০৪ সালে। রোগীদের উন্নত সেবার জন্য এমআরআই মেশিনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে আইপিডিসি এক বছরের মধ্যে ২০ কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু নয় কোটি টাকা দেওয়ার পর আর ঋণ দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। পরে আইপিডিসি’র নির্দেশে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকে যান ব্রাইটন হসপিটালের উদ্যোক্তা। তারা ঋণ হিসাবে দেয় আট কোটি টাকা। এতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির কার্যক্রম আংশিক চালু হলেও অবশিষ্ট ঋণের অর্থছাড় না পাওয়ায় অর্থ সংকটে অনেক মেশিন চালু করা সম্ভব হয়নি।

আবার বেশকিছু মেডিকেল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের মূল্য সময়মতো পরিশোধ না করায় স্থাপন খরচ বেড়ে যায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। সময়মতো ঋণও পরিশোধ করতে পারেনি ব্রাইটন হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে ঋণ পরিণত হয় খেলাপিতে। এক বছর হাজতবাসও করতে হয় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তিন কোটি টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় ব্রাইটন হসপিটাল চলতি মূলধনের অভাবে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি এবং আইপিডিসি ও ব্যাংকের নির্ধারিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেনি মর্মে প্রতীয়মান হয়। আইপিডিসি কর্তৃক সঠিক সময়ে টাকা ছাড় না করা এবং তিন কোটি টাকার ব্যবস্থা করতে না পারার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

ব্রাইটন কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার জন্য দুবারে মোট নয় কোটি টাকার অর্থায়ন করে আইপিডিসি। পরে আরও আট কোটি টাকার ফান্ড ম্যানেজ করার জন্য আট থেকে ১০ মাস সময় চাওয়া হয় ব্রাইটনের কাছে। প্রায় এক বছর পর শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখা থেকে সেই ফান্ড ম্যানেজ করে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ১৭ কোটি টাকার ঋণ দিলেও বাকি তিন কোটি টাকা ছাড় করেনি আইপিডিসি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এমন তথ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন ও ভিজিলেন্স বিভাগের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, ধানমন্ডি শাখার গ্রাহকের (ব্রাইটন হাসপাতাল) আবেদন ছাড়াই বেআইনিভাবে ঋণের আসল টাকা ও মুনাফার বিভাজন ব্যতীত ঋণ হিসাবটি কারওয়ানবাজার শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী আইপিডিসি নয় কোটি এবং অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ফান্ড ম্যানেজ করে ১১ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আইপিডিসি নয় কোটি টাকা দিলেও বাকি ১১ কোটি টাকার মধ্যে আট কোটি টাকা ম্যানেজ করা সম্ভব হয়।

তিনি যে তিন কোটি টাকার ঋণের কথা বলছেন, আমরা তো চলতি মূলধনে ঋণ দেই না। ঋণের বিপরীতে জমি জামানত রাখার কথা ছিল ব্রাইটন কর্তৃপক্ষের, কিন্তু তা রাখেনি। ১৮ বছর হয়েছে ঋণ দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত মাত্র ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। ঋণ নেওয়ার পর ভালো ব্যবসা করেছে। বাকি অর্থ পরিশোধে তারা কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এখন যদি তিনি (গ্রাহক) উদ্যোগী হন তাহলে আমরা সমস্যার সমাধান করব

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তিন কোটি টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় ব্রাইটন হসপিটাল চলতি মূলধনের অভাবে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি এবং আইপিডিসি ও ব্যাংকের নির্ধারিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেনি মর্মে প্রতীয়মান হয়। আইপিডিসি কর্তৃক সঠিক সময়ে টাকা ছাড় না করা এবং তিন কোটি টাকার ব্যবস্থা করতে না পারার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে গ্রাহকও বলছেন, প্রতিশ্রুত ঋণ না পেয়ে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলছে, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন ব্রাইটন কর্তৃপক্ষ। এমন অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে একাধিক মামলা করেছে উভয়পক্ষ। যা আদালতে বিচারাধীন। ২০০৯ সালে ব্রাইটেনের বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে মামলা করে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক। কারণ, টাকা পরিশোধ করতে না পারা। অপরদিকে, সময়মতো ঋণ না দেওয়ায় ৮৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্রাইটন।

ইচ্ছাকৃতভাবে আমি খেলাপি নই। আইপিডিসি ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক অনুমোদিত ২০ কোটি টাকার ঋণ আমাকে পুরোপুরি দেয়নি। ফলে আমার প্রজেক্টের শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এখন আমি বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় পড়ে দেউলিয়ার পথে। ব্যবসা-বাণিজ্য সব শেষ। এখন বরাদ্দ হওয়া অবশিষ্ট অর্থসহ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল যদি পাই তাহলে ব্যবসাটি ফের সচল করে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির (ব্রাইটন হসপিটাল) কাছে ২০০৯ সাল শেষে আইপিডিসি’র পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ১১৮ টাকা (সুদসহ)। অপরদিকে, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের আকার এখন ১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা (অনারোপিত সুদ বাদে)।

এ প্রসঙ্গে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের এমডি ও সিইও মমিনুল ইসলাম বলেন, ২০০৩ সালে ব্রাইটন হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে নয় কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। এখন সুদ-আসলে তাদের কাছে পাওনা ৫০ কোটি টাকার ওপরে। ঋণ আদায়ে গ্রাহকের সঙ্গে একাধিকবার বসেছি, সহযোগিতা করতে চেয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ঋণ পরিশোধ করছেন না। বিষয়টি নিয়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা হয়েছে। যা এখন বিচারাধীন।

প্রতিশ্রুত ঋণ না পাওয়ায় তা পরিশোধ করতে পারেননি গ্রাহক, উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন— গ্রাহকের এমন অভিযোগের উত্তরে আইপিডিসি’র এমডি বলেন, ‘তিনি যে তিন কোটি টাকার ঋণের কথা বলছেন, আমরা তো চলতি মূলধনে ঋণ দেই না। ঋণের বিপরীতে জমি জামানত রাখার কথা ছিল ব্রাইটন কর্তৃপক্ষের, কিন্তু তা রাখেনি। ১৮ বছর হয়েছে ঋণ দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত মাত্র ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। ঋণ নেওয়ার পর ভালো ব্যবসা করেছে।

বাকি অর্থ পরিশোধে তারা কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এখন যদি তিনি (গ্রাহক) উদ্যোগী হন তাহলে আমরা সমস্যার সমাধান করব।’ পুনঃঅর্থায়নের কোনো সুযোগ আছে কিনা— জানতে চাইলে মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের খেলাপিরা সবসময় সুযোগ খোঁজেন। তিনি তো সৎ ইচ্ছা নিয়ে কাজ করছেন না। নতুন করে টাকা দিলে তিনি আর ফেরত দেবেন না।’

ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর অভিযোগ, ‘গ্রাহকের সম্পত্তি লুট করে নেওয়ার লক্ষ্যে সুকৌশলে আইপিডিসি-শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ মাফিয়াকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের একজন পরিচালক। যিনি ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মালিক।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এম. শহীদুল ইসলামের মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠালেও কোনো উত্তর মেলেনি।

ব্রাইটন হসপিটালের এমডি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে আমি খেলাপি নই। আইপিডিসি ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক অনুমোদিত ২০ কোটি টাকার ঋণ আমাকে পুরোপুরি দেয়নি। ফলে আমার প্রজেক্টের শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এখন আমি বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় পড়ে দেউলিয়ার পথে। ব্যবসা-বাণিজ্য সব শেষ। এখন বরাদ্দ হওয়া অবশিষ্ট অর্থসহ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল যদি পাই তাহলে ব্যবসাটি ফের সচল করে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’