দেশ প্রতিক্ষণ, সিলেট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানী লাফার্স হোলসিম অবৈধভাবে চুনাপাথর ব্যবসার খোলাবাজার নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে। ভারত থেকে চুনাপাথর এনে তা ক্রাশিং করে খোলাবাজারে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ খোলাবাজারে তা বিক্রির কোনো অনুমোদন নেই। এতে সরকারের যে শুধু রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তা নয়, সিলেট বিভাগের ৫ শতাধিক ক্রাশার মেশিন ও লক্ষাধিক ব্যবসায়ী-শ্রমিকের পেটে লাথি মারছে লাফার্জ সিমেন্ট কতৃপক্ষ।

মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বৃহত্তর সিলেটের চুনাপাথর আমদানী ও ব্যবসার সাথে জড়িত ৩০টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। আগামী ৮ মার্চের মধ্যে লাফার্জ অবৈধ ব্যবসা বন্ধ না করলে ৯ মার্চ থেকে আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেন পরিষদের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক, এফবিসিসিআই’র ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কোম্পানি স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে রুটিরুজি কেড়ে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর রুপকল্প ভিশন ২০৪১-এর সাথে লাফার্জের বর্তমান কর্মকান্ড সাংঘর্ষিক। কোম্পানিটি আর্থিক মোনাফার জন্য দেশ ও দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

তিনি জানান, সুনামগঞ্জের ছাতক, চেলা, ইছামিতি, বড়ছড়া, বাগালি ও সিলেটর ভোলাগঞ্জ, তামাবিল শুল্ক স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি করা হয়। পরে তা ক্রাশিং বা এগ্রিগেট পদ্ধতিতে ছোট করে বৃহত্তর সিলেটের ব্যবসায়ীরা খোলাবাজারে বিক্রি করে আসছেন। এমনিতেই অধিকাংশ চুনাপাথর কারখানা বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু ছাতকস্থ লাফার্জ সুরমা দীর্ঘদিন ধরে খোলাবাজারে চুনাপাথর বিক্রির চেষ্টা করে আসছে।

শুরুতে তারা সফল না হলেও এখন সফল হচ্ছে। তাদের কোম্পানি সিমেন্টের ক্লিঙ্কার উৎপাদনের কাচামাল চুনাপাথর কনভেয়ার ভেল্টের মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করছে। সরকারের সাথে চুক্তিমতে সেসব চুনাপাথর শুধুমাত্র সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহার করবে। ক্রাশিং করে খোলাবাজারে বিক্রি করার কথা নয়। কিন্তু লাফার্জ আইন অমান্য করে ও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাজারে ক্লিয়ার এগ্রিগেট নাম দিয়ে চুনাপাথর বিক্রি শুরু করেছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলায় হয়, ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ লাফার্জের প্লান্ট ম্যানেজার চেং জু সং ছাতকের চুনাপাথর ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে আশ্বস্থ করেছিলেন চুনাপাথর বিক্রির কোনো পরিকল্পনা নেই লাফার্জের। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে কোম্পানির ভেতর প্লান্ট বসিয়ে কনভেয়ার ভেল্ট দিয়ে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির জন্য আনা চুনাপাথর ক্রাশিং করে ক্লিয়ার এগ্রিগেট নাম দিয়ে খোলাবজারে চুনাপাথর বিক্রি শুরু করে তারা। এতে ব্যবসায়ীরা শুধু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেনা, তাদের ৫শ কোটি টাকা পুঁজি হারিয়ে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়বে।

সেলিম চৌধুরী আরও জানান, ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ায় ইতোমধ্যে বিষয়টি পরিকল্পনামন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্থানীয় এমপি, পৌর মেয়র, এফবিসিসিআই’র সভাপতিকে অবহিত করা হয়েছে। মন্ত্রী ডিওলেটারও দিয়েছেন রাজস্ব বোর্ডকে।

সংবাদ সম্মেলনে ছাতক লাইমস্টোন এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপ, তামাবিল কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপ, ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানি কারক গ্রুপ, তাহিরপুর কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপ, ছাতক পাথর ব্যবসায় সমিতিসহ ৩০টি সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব আবুল হাসান।