দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের ভুল তথ্য দিয়ে আসছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম বাড়ার পরও কোম্পানিকে দেখানো হচ্ছে দরপতনের তালিকায়। বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়ার পর কোম্পানির শেয়ার দাম সমন্বয় করার কার্যদিবসে নিয়মিতভাবে এমন ভুল তথ্য দিচ্ছে শেয়ারবাজারটি।

অথচ ডিএসইর অনেক পরে জন্ম নেয়া অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) দাম সমন্বয় করে ঠিকই একই কোম্পানিকে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান দিচ্ছে। সেই সঙ্গে সমন্বয়ের পর শেয়ারের দাম প্রকৃত কতো শতাংশ বেড়েছে, তার সঠিক হিসাব তুলে ধরছে সিএসই।

সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে জন্য ৫০০ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৩০০ শতাংশ নগদ ও ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার রয়েছে। বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়ার কারণে ৩ মার্চ রেকর্ড ডেটের পর বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ার দাম সমন্বয় করে দাঁড়ায় ৫১৮ টাকা। এটিই ছিল আজ কোম্পানিটির ওপেনিং প্রাইস বা লেনদেন শুরুর দাম।

তবে বিনিয়োগকারীরা দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৫৫৬ টাকা ৮০ পয়সায় নিয়ে যান। এ হিসাবে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

সার্কিট ব্রেকারের কারণে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ার দাম একদিনে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার সুযোগ আছে। সে হিসেবে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। এমন দাম বাড়ার পরও কোম্পানিটিকে দরপতনের তালিকায় শীর্ষ স্থানে দেখাচ্ছে ডিএসই। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর প্রতিটি শেয়ারের দাম ৯৯৭ টাকা ২০ পয়সা বা ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কমেছে।

ডিএসই এমন ভুল তথ্য দিলেও অপর শেয়ারবাজার সিএসই ঠিকই দাম বাড়ার তালিকায় দেখাচ্ছে কোম্পানিটিকে। সিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ার দাম ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

এ বিষয়ে সিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, `ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে। এ কারণে রেকর্ড ডেটের আগে এক হাজার ৫৫৪ টাকায় থিতু হওয়া কোম্পানিটির শেয়ার দাম রেকর্ড ডেটের পর সমন্বয় করে দাঁড়ায় ৫১৮ টাকা (১৫৫৪/৩= ৫১৮)। এ সমন্বয় করেই আজ সিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়া বা কমার তথ্য দেয়া হয়েছে।‘

তিনি বলেন, `সিএসই নিয়মিত বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম রেকর্ড ডেটের পর সমন্বয় করে দাম বাড়া বা কমার তথ্য প্রকাশ করে। কিন্তু ডিএসই এই নিয়ম ফলে করে না। কী কারণে তারা এই ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করে তা তারাই বলতে পারবে।‘

যোগাযোগ করা হলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, `প্রকৃত তথ্য আজ ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ার দাম বেড়ে হল্টেড হয়েছে। কিন্তু ডিএসই কোম্পানিটিকে দাম কমার তালিকায় দেখাচ্ছে। ডিএসই দীর্ঘদিন ধরেই এটা করছে। এমন ভুল তথ্য দেয়ার কারণে যারা পুরাতন বিনিয়োগকারী তারা হয়তো বিভ্রান্ত হচ্ছেন না, কিন্তু নতুনরা বিভ্রান্ত হতে পারেন।‘

তিনি বলেন, `একটি কোম্পানি বোনাস শেয়ার দেয়ার পর তার দাম বেড়েছে না কমেছে তা সমন্বয় করে সঠিক হিসাব দেয়া উচিত। কিন্তু ডিএসইর সফটওয়্যার বা আইটির সে সক্ষমতা আছে কি-না আমার জানা নেই।‘

এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটুয়ারীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা টেকনিক্যাল বিষয়। এ বিষয়ে না জেনে আমার পক্ষে বক্তব্য দেয়া সম্ভব না। তবে যেহেতু আপনি প্রশ্নটি তুলেছেন আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা চাইবো, কেন দুই রকম (ডিএসই ও সিএসইতে ভিন্ন) হলো।‘

যোগাযোগ করা হলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা পরীক্ষা করে দেখবো। কোন পদ্ধতিতে হিসাব করা হয়েছে তা ডিএসই ও সিএসই’র কাছে জানতে চাওয়া হবে। তারপর দেখা হবে কে ভুল এবং কে সঠিক।’