দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: গণটিকা প্রয়োগ শুরুর প্রায় এক মাস পর করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে সরকারপ্রধান তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই টিকা নেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তার সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস রানা। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা।

গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। গত ২২ জানুয়ারি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশে টিকা আসে প্রথমবারের মতো। সেদিন ভারত সরকারের উপহারের ২০ হাজার টিকা পৌঁছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তিন দিন পর বাংলাদেশের কেনা ৫০ লাখ টিকা আসে।

সরকার শুরুতেই সিদ্ধান্ত নেয়, টিকা প্রথমে পাবে সম্মুখসারির যোদ্ধা অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারের অত্যাবশ্যকীয় কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের রাখা হয় অগ্রাধিকার তালিকায়।

কিন্তু টিকা আসার পর বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই টিকা নিরাপদ নয়। টিকা নিলে মানুষ মারা যেতে পারে। টিকা নিরাপদ হলে প্রধানমন্ত্রী কেন টিকা নেবেন না, সে প্রশ্নও তোলে দলটি।

২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তাকে দিয়ে দেশে শুরু হয় করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম। সেই অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যুক্ত থাকা অবস্থায় প্রথমে টিকা দেয়া হয় পাঁচজনকে। এই পাঁচজনের মধ্যে সবার শেষে টিকা পান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। তাকে যখন টিকা দেয়া হচ্ছে সে সময় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘মনে হচ্ছে আমরাও গিয়ে নিয়ে আসি।’ পরক্ষণেই তিনি বলেন, ‘আগে আগে নিলে বলত নিজেই নিল অন্য কাউকে দিল না। সবাইকে দিয়ে নিই তারপরে।’

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা প্রয়োগে একটি লক্ষ্য পূরণ করার পর তিনি নিজে তা নেবেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘কত পার্সেন্টকে দিতে পারলাম, সেটা আগে দেখতে চাই। অবশ্যই টিকা নেব। আমাদের একটা টার্গেট ঠিক করা আছে। সেটা পূরণ হওয়ার পরে যদি টিকা থাকে তাহলে নেব।’

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে শুরু হয় টিকা কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ। এটি শতকরা হিসাবে ১ দশমিক ৮ শতাংশের বেশি। বিএনপি এখন টিকার নিন্দা ছেড়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেও টিকা নিয়েছেন স্ত্রীকে নিয়ে।

বাংলাদেশ সিরাম থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও পৌনে ৭ কোটির মতো টিকা পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা পেয়েছে। দেশে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসাবে এই টিকা পাওয়া যাবে। যদিও সম্প্রতি জানানো হয়েছে দেশের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশের জন্য টিকা পাওয়া যাবে কোভ্যাক্সের পক্ষ থেকে। এই টিকার মধ্যে প্রথমে আসবে ১ কোটি ৯ লাখ টিকা।