দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের ব্যাংক মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশে সন্তষ্ট প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির ঘোষিত লভ্যাংশ এফডিআরের চেয়ে বেশি মুনাফা দিবে। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি ব্যাংক মার্কেন্টাইল।

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারপ্রতি ১ টাকা করে নগদ ও ৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ২০টি শেয়ারে একটি করে বোনাস শেয়ার দেয়ার প্রস্তাব করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের এই সিদ্ধান্ত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে।

এই ব্যাংকটি যে লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে, সেটি প্রতিষ্ঠানটিতে আমানত রাখলে যে হারে সুদ পাওয়া যাবে, তার চেয়ে বেশি। এখন দেশে আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। তবে বর্তমানে ব্যাংকের ভল্টে টাকা উপচে পড়া অবস্থায় সুদহার পাওয়া যাচ্ছে এর চেয়ে কম। কিন্তু ১৩ টাকারও কম দাম থাকা এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা নগদ হিসেবে ৭.৭৫ শতাংশ লভ্যাংশ পেয়ে যাবেন। সঙ্গে যে বোনাস শেয়ার মিলবে সেটি অবশ্য শেয়ারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলো খুব ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের এই খাতে আগ্রহী হওয়া উচিত।’ করোনাকালে এখন পর্যন্ত যে তিনটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে একমাত্র মার্কেন্টাইলেরই আয় গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম হয়েছে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ২৬ পয়সা। আগের বছর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ২ টাকা ৩৭ পয়সা। ওই বছর বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ বোনাস এবং ১ টাকা ১০ পয়সা নগদে লভ্যাংশ দিয়েছিল মার্কেন্টাইল।

বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির শেয়ারদর ছিল ১২ টাকা ৮০ পয়সা। ২০১০ সালের মহাধসের পর থেকে ব্যাংকিং খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে অনেকটাই। কিন্তু এই খাতের কোম্পানিগুলো প্রতি বছরই বেশ ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। গত পাঁচ বছরে বেশ কয়েকটি ব্যাংক এফডিআরের সুদহারের চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। এর একটি মার্কেন্টাইল ব্যাংক।

২০১৫ সালে এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা শেয়ারদরের ১১.২১ শতাংশ নগদে লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েছেন। শেয়ারের মূল্যের সঙ্গে তুলনা করে যে আর্থিক মুনাফা তাকে পুঁজিবাজারে বলে ইল্ড। ২০১৬ সালে ৯.৯৩ শতাংশ ইল্ডের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার পেয়েছেন তারা।

২০১৯ সালে আবার পেয়েছেন ৮.৩৩ শতাংশ নগদ মুনাফা (ইল্ড) এবং ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার। মার্কেন্টাইলের লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৫ এপ্রিল। অর্থাৎ সেদিন যাদের হাতে ব্যাংকের শেয়ার থাকবে তারাই পাবেন এই লভ্যাংশ।

এবার ব্যাংকটির চূড়ান্ত মুনাফা আগের বছরের চেয়ে খানিকটা কম হলেও পরিচালন মুনাফা ছিল অনেক কম। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকটি গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে মুনাফা করে ৪৫০ কোটি টাকা। আগের বছর আয় ছিল ৭৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সদ্যসমাপ্ত বছরে পরিচালন মুনাফা কমে ৪০ শতাংশ। তবে নিরীক্ষিত হিসাবে মুনাফা কমেছে সামান্যই।

এর আগেও যে দুটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেগুলোও মহামারির বছরে আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করেছে। বেড়েছে লভ্যাংশও।চলতি বছর প্রথম ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ডাচ বাংলা। কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি দেড় টাকা নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফাও গত বছরের তুলনায় ৯০ কোটি টাকা কম ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত মুনাফা বেশি হয়েছে ২৫ শতাংশের মতো। ২০১৯ সালে এই ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৭ টাকা ৮৯ পয়সা।

তবে ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি আয় বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা। কোম্পানিটি লভ্যাংশও বাড়িয়েছে। আগের বছর শেয়ারপ্রতি দেড় টাকার সঙ্গে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল তারা। দ্বিতীয় ব্যাংক হিসাবে শাহজালাল ব্যাংকের চূড়ান্ত আয় ও লভ্যাংশ বেড়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারপ্রতি ৭০ পয়সা নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস দেয়ার প্রস্তাব করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। গত বছর তারা ৫ শতাংশ বোনাসের সঙ্গে শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

এই ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৯৫ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ৭০ পয়সা। এই ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা গত বছরের তুলনায় কম হয়েছিল ২০০ কোটি টাকা। তবে নিরীক্ষিত হিসাবে চূড়ান্ত মুনাফা বেড়েছে।

অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, মহামারির বছরে ব্যাংকে প্রভিশনিংয়ে ছাড় দেয়ার কারণে চূড়ান্ত মুনাফা বেড়ে থাকতে পারে। প্রস্তাবিত এই লভ্যাংশ চূড়ান্ত হবে ২৮ এপ্রিল কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে। করোনাকালে এই এজিএম হবে ভার্চুয়ালি।