দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেয়ারবাজারে এখন আলোচিত নাম অ্যাসেট ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এএমসি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। যে কারনে এই প্রতিষ্ঠানটির অধীনে পরিচালিত ২টি ফান্ড অন্যত্র সড়িয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইউনিটহোল্ডাররা। কিন্তু বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির সব অনিয়মকে উপক্ষো করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কমিশনার ড. মিজানুর রহমান। এ নিয়ে তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।

তবে শুরুতে ফান্ড ২টি অন্য সম্পদ ব্যবস্থাপকের কাছে হস্তান্তরে মিজানুর রহমান নিজেই বাধাঁ হয়ে দাড়িঁয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন ইউনিটহোল্ডারা। ওই সময় এ বিষয়টি কমিশন মিটিংয়ে উঠার সময় ঠিক হলেও মিজানুর রহমান তা আটকে দেন। যা দীর্ঘদিন চাঁপা পড়ে ছিল।
কমিশনার মিজানুর রহমান এলআর গ্লোবালের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে চেয়ারম্যানের উদাসীনতা বা ছাড় দেওয়াকে দায়ী করেছেন। অথচ বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্তে কোম্পানিটির অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন বিএসইসির কমিশনার মিজানুর রহমান। তিনি এক চিঠিতে অ্যাসেট ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানটির “আইন লঙ্ঘন” এবং একাধিক “আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে চেয়ারম্যান শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে উপেক্ষা করার অভিযোগ এনেছেন”। এসব অনিয়ম গত বছর বিএসইসির কমিটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল।

এছাড়া ২০১৪ সালে এলআর গ্লোবালের অনিয়ম অনুসন্ধান এবং তৎকালীন কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছিল। গত ৯ মার্চের এক চিঠিতে মিজানুর রহমান বলেছেন, অনিয়মের দায়ে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ, এর প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) এবং অন্যান্য ম্যানেজমেন্ট নির্বাহিদেরকে তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে কমিশন আইনগত ব্যবস্থা নিতে দায়বদ্ধ।

পাঁচ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে ছয়টি তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের পরিচালক সম্পদ ব্যবস্থাপক এলআর গ্লোবালের অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। এই অ্যাসেট ম্যানেজার ক্রমাগত আর্থিক কেলেঙ্কারি করে যাচ্ছে। এরমধ্যে অর্থপাচার, ব্যক্তিগত লাভের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদের অপব্যবহার এবং অবৈধ বিনিয়োগ এবং ব্যয় রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

গত নভেম্বরে বিএসইসির তদন্ত কমিটি এলআর গ্লোবালকে ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে বহিষ্কার করার এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ফান্ডগুলোকে অন্য সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের সুপারিশ করে।

তবে এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম প্রতিটি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিএসইসির কমিশনার মিজান অভিযোগ করেছেন, “বিএসইসির চেয়ারম্যান এই ধারাবাহিক আর্থিক কেলেঙ্কারি ও আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি উপেক্ষা করতে চান।

যে কারনে মিজানুর রহমান গত ৩ ফেব্রুয়ারি কমিশন সভায় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও কমিশন আইন বিভাগের বিবিধ এজেন্ডা ছাড়া, এমনকি ওয়ার্কিং পেপার ছাড়াই হালকাভাবে আলোচনা করেছিল।

যা মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিভাগের সঙ্গে পরামর্শও করা হয়নি এবং বিষয়টি সর্ম্পক্যে আগে জানানো হয়নি। চেয়ারম্যান এই বিভাগের অফিশিয়াল মতামত নেওয়া পছন্দ করেনি। যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা কমিশনারের কাছে বোধগম্য নয় বলে চিঠিতে লেখা হয়েছে। এছাড়া ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে গ্রীন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড ও ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের অ্যাসেট ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউনিটোল্ডারদের রায় প্রত্যাহার করারও সমালোচনা করেছেন মিজানুর রহমান।

শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে কমিশনের এই অ্যাসেট ম্যানেজার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার গুরুতর ভুল হবে। যা ৯৩টি মিউচুয়াল ফান্ডের উপর সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং হাজার হাজার মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে কমিশনের নিয়ন্ত্রন কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

ড. মিজানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। সবকিছু বিএসইসির চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে সবিস্তারে আছে বলে জানান।

এলআর গ্লোবাল সম্পর্কে কমিশনার মিজানুর রহমানের অসন্তুষ্টি এবং দোষারোপের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। সুত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড